ভারতবর্ষে আধুনিক শিল্পযাত্রার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিত্রবিদ্যাচর্চা ও আধুনিকতার জিজ্ঞাসায় চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এক নবীন মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তিনি। প্রাচ্যের ধারার সাথে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে তাঁর শিল্প হয়ে উঠেছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতায়, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১৮৬৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। পরিবারে ছবি আঁকার রীতি ছিল। কনিষ্ঠ ভাই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বোন সুনয়নীও চমৎকার ছবি আঁকতেন। গগনেন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শেখেন হরিনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তবে শিল্পী জীবনে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা তাঁকে দিয়েছিল স্বকীয়তা। পাশ্চাত্যের বৃহত্তর ভুবন তাঁর শিল্পসত্তা ও মানসযাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল। কখনো ইউরোপীয় ধাঁচে, কখনো ফরাসি ঘরানায়, কখনো জাপানি ঐতিহ্য থেকে উপাদান সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রতিকৃতি, দৃশ্যচিত্র, বিমূর্ত চিত্র, ব্যঙ্গ চিত্র – চিত্রকলার নানা দিক নিয়ে কাজ করেছেন গগনেন্দ্রনাথ। সকল ক্ষেত্রেই পরিচয় মেলে তাঁর মেধা ও মননের, উদ্ভাবনী শক্তির। ব্যঙ্গচিত্রী হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। অভিনয়েও ছিলেন দক্ষ শিল্পী। রবীন্দ্রনাথের অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন গগনেন্দ্রনাথ। সর্বোপরি সামাজিক দায়বদ্ধতা আর অঙ্গীকারের চেতনায় চালিত হয়েছিল তাঁর শিল্পীসত্তা। তৎকালীন সম্ভ্রান্ত সমাজ নিয়ে বেশ কিছু ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন তিনি। ১৯০৫-এ যুক্ত ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে। ‘ভোঁদর বাহাদুর’ নামে তাঁর একখানা শিশুপাঠ্য গ্রন্থ রয়েছে। আর ব্যঙ্গচিত্রাবলীর অনেকগুলিই ‘বিরূপ বজ্র’, ‘অদ্ভুতলোক’, ‘নবহুল্লোড়’, ‘রিফর্ম স্ক্রিম’ প্রভৃতি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৩৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রয়াত হন।