খেলার মাঠের প্রতিবন্ধতা প্রত্যাশিত নয়

| রবিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

খেলা যেমন মানুষের পছন্দের মাধ্যম, তেমনি মেলাও। খেলা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য বড় গুরুত্বপূর্ণ, মেলা তেমন বিনোদনের জন্য। খেলা মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটায়। এ জন্য মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। খেলা বন্ধ করলে শিশু ও যুবকদের শারীরিক বিকাশে আঘাত আসে। তেমনি মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এজন্য খেলার মাঠের প্রতিবন্ধতা যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি মেলার জন্যও নির্ধারিত স্থান থাকা দরকার।

নগরীর আউটার স্টেডিয়াম আজ খেলার বদলে পরিণত হয়েছে মেলার মাঠে। গত শুক্রবার দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আউটার স্টেডিয়াম। একদিকে যেমন ঐতিহ্যের সাক্ষী তেমনি অপরদিকে অবহেলারও সাক্ষী। যে আউটার স্টেডিয়াম এক সময় মুখর থাকতো ক্রীড়াবিদদের পদচারণায় সেই আউটার স্টেডিয়াম গত দুই দশক ধরে যেন ক্রীড়াবিদদের জন্য নিষিদ্ধ এক জনপদ। কারণ গত দুই দশক ধরে আউটার স্টেডিয়ামে যত খেলা হয়েছে তার চাইতে বহুগুণ বেশি হয়েছে মেলা। যে আউটার স্টেডিয়ামে এক সময় স্টার সামার কিংবা স্টার যুব টুর্নামেন্টের মত বড় এবং দেশের ক্রিকেটারদের বহু কাঙ্ক্ষিত টুর্নামেন্ট হতো সে আউটার স্টেডিয়ামে গত দুই দশকে কোনও খেলাধুলার আয়োজনই হয়নি। অথচ এই আউটার স্টেডিয়ামকে রক্ষা করার জন্য কত আন্দোলনই না হয়েছে। একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে যেই কদু সেই লাউ। বরাবরই নানা মেলার দখলে চলে গেছে আউটার স্টেডিয়াম। কোনও পরিকল্পনাই দেখেনি আলোর মুখ। মেলা আয়োজনের পাশাপাশি, নানা গাড়ি, ডেকোরেশন কোম্পানির সামগ্রী রাখার নিরাপদ স্থানেও যেন পরিণত হয় আউটার স্টেডিয়াম। এরই মধ্যে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতরেই নির্মাণ করা হয়েছে পাবলিক টয়লেট। চারদিকে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা।’

স্বাধীন দেশে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ একবার তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এই যে খেলার মাঠ সব দখল হয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা সব কই যাবে? রাস্তা ঘাটে ঘুরবে, অকারণে বাজারে যাবে, মানুষের পকেটে হাত ঢুকাবে।’ বিশ্লেষকরা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সে রাষ্ট্রনায়কের ভবিষ্যদ্বাণীই ফলছে। পরিবর্তিত সময়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও সংকট আরও গভীর। শুধু মানুষের পকেটে হাত দিচ্ছে না, ভদ্র ঘরের ছেলেরা আজকাল মাদক সেবনের জন্য বাবার বা ভাড়াটে প্রাইভেট কার নিয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে অবলীলায় মানুষও খুন করছে। পথেঘাটে উত্যক্ত করছে নারীকে, জড়িয়ে পড়ছে আরও নানা অপরাধে।

খেলার মাঠমানবসভ্যতার বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের সাক্ষী। এক একটি খেলার মাঠ এক এক অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ইতিহাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই খেলার মাঠের গুরুত্ব বুঝলেও কিছু মানুষ বাংলাদেশের সব খেলার মাঠ চুরমার করে দিচ্ছে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দখল কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে আমাদের স্মৃতিময় খেলার মাঠগুলো আজ বিপদে। খেলার মাঠ বাঁচাতে দেশজুড়ে আজ লড়ছে মানুষ। যদিও খেলার মাঠ রক্ষায় জনআন্দোলন নতুন ঘটনা নয়।

দৈনিক আজাদীর প্রতিবেদনে জানা যায়, অনেকটাই পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়ামকে রক্ষায় এবার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি দ্বিতীয়বার পরিদর্শন করেছেন আউটার স্টেডিয়াম। কিভাবে আউটার স্টেডিয়ামকে আবার খেলার মাঠে পরিণত করা যায় সে লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনাও গ্রহণ করেছেন। প্রথমত তিনি আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণ করে তা নিশ্চিত করতে চান। আর সে কারণেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সঙ্গে করে নিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে সীমানা নিশ্চিত করে সে সীমানার মধ্যে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর আউটার স্টেডিয়ামকে করা হবে রেড মার্ক। তার পরেই শুরু হবে মাঠ সংস্কারের কাজ। দৈনিক আজাদীকে জেলা প্রশাসক বলেন, আমি এই নগরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ক্রীড়া সংগঠক সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। তারাও খেলার মাঠে আর মেলা হোক সেটা চান না। আমরা সবাই মিলে খেলার মাঠ খেলোয়াড়দের মাঝে ফিরিয়ে দিতে চাই। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আউটার স্টেডিয়াম এখন একরকম ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চার পাশের রেস্টুরেন্ট আর ভাসমান দোকানগুলো থেকে ময়লা পড়ছে সেখানে। ড্রেন দিয়ে যাচ্ছে পাবলিক টয়লেটের ময়লা। ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে চারপাশ। এখন এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করে আউটার স্টেডিয়ামকে সংস্কার করাটা বড় একটি চ্যালেঞ্জও। আর সে চ্যালেঞ্জ উৎরাতে চান জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় মেলা আয়োজনের যে তোড়জোড়, সেটা বন্ধ করে খেলার আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেলার জন্য অন্য কোনো স্থান বাছাই করতে হবে। খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা, পায় জীবনসংগ্রামের দুর্জয় মনোভাব। তারজন্য এই মাঠ অবারিত হোকসেই প্রত্যাশা সুধীজনের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে