খেলাপিদের দখলে কয়েক হাজার একর জায়গা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে রাস্তার দুই ধারের শিল্পায়নযোগ্য কয়েক হাজার একর জায়গা বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপিদের দখলে। আবার বহু জায়গা বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ শিল্প পণ্যে পরিণত করে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ চট্টগ্রামে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জায়গার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। এতে বিনিয়োগ তীর্থ হিসেবে খ্যাত অপার সম্ভাবনার চট্টগ্রামে শিল্পায়নের সুযোগ ক্রমে কমছে। হাতছাড়া হচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য।
সূত্র জানায়, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সুবিধা থাকার কারণে চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় শিল্পায়নের স্বর্ণযুগ বিরাজ করেছিল। পাকিস্তান আমলে প্রচুর শিল্পায়ন হয়েছিল চট্টগ্রামে। স্বাধীনতার পরও শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে শিল্পায়নে মারাত্মক রকমের বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করে। বিশেষ করে ভূমির অভাব প্রকট হয়ে উঠায় ক্রমান্বয়ে কমছে শিল্পায়ন। একই সাথে ভূমির মূল্য বাড়তে থাকায় সাধারণ শিল্পপতিদের পক্ষে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমি ক্রয় করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুর টাঙ্গাইল পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে শত শত একর ভূমি অত্যন্ত সস্তায় কেনার সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এতে চট্টগ্রামে ব্যবসা করতেন এমন বহু বড় বড় গ্রুপও ঢাকার সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, টাঙ্গাইলসহ সন্নিহিত অঞ্চলে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু চট্টগ্রামে সেই সুযোগ না থাকায় এখানে ওভাবে শিল্পায়ন হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্লটের সংকট তৈরি হয়েছে অন্তত গত দুই যুগ থেকে। পরবর্তীতে কর্ণফুলী ইপিজেড (কেইপিজেড) প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা শেষ হয়ে যায় চোখের পলকে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ড মীরসরাই পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে কয়েক
বিঘা জমি নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতো কোন জায়গা নেই। আবার বহু জায়গা বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ কিনে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রেখেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম শহর থেকে কালুরঘাট হয়ে বোয়ালখালী, পটিয়া, আবার কর্ণফুলী ব্রিজের দক্ষিন পাড়ে হাজার হাজার একর জায়গায় বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের সাইনবোর্ড ঝুলছে।
এসব ভূমির বেশির ভাগই বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ কিনে ব্যাংকের নিকট বন্ধক দিয়ে বহু টাকা লোন নিয়েছে। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে খেলাপী হয়ে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ মামলায় জড়িয়ে শিল্পায়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন। রাস্তার দুই পাশের অতি মূল্যবান জায়গাগুলো অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট বন্ধকের সাইনবোর্ড কিংবা শিল্প গ্রুপের সাইনবোর্ড ছাড়া অন্য কিছু নেই এসব ভূমিতে।
জায়গার অভাব প্রকট হয়ে উঠায় শিল্পায়ন না হওয়ায় চট্টগ্রাম ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে চট্টগ্রামের অবস্থান কেবলই পেছনের দিকে ছুটছে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে গার্মেন্টস ছিল ১৩৩টি। এরমধ্যে চালু ছিল ১২৬টি। ওই সময় দেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ৩৯ শতাংশের যোগান দেয়া হতো চট্টগ্রাম থেকে। ২০০৫ সালে এসে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা হয় ৬৯৯টি গার্মেন্টস কারখানা। এর মধ্যে চালু ছিল ৬১০টি। ওই সময় জাতীয় রপ্তানির ৩৪ শতাংশের যোগান দিতো চট্টগ্রাম। ১৫ বছর পর ২০২০ সালে এসে চট্টগ্রামে গার্মেন্টসের সংখ্যা ৬টি কমে ৬৯৩টিতে ঠেকে। এরমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৪০০টি কারখানা। এ্যাকর্ড এ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করে শেয়ারিং বিল্ডিং থেকে একক ভবনে যেতে না পারার কারণেই বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ায় প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। এক সময় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অংশীদারিত্ব ৩৯ শতাংশের স্থলে বর্তমানে মাত্র ১৫ শতাংশে নেমে আসে। এদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা ঢাকা অঞ্চলে গিয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সূত্রগুলো বলেছে, চট্টগ্রামে খেলাপি শিল্পপতিদের যারা ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে দেশ ছেড়েছেন তাদের দখলে থাকা ভূমিগুলো রিলিজ করে প্রকৃত শিল্পপতিদের কাছে বাজারদরে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়। এতে জায়গার অভাবে কারখানা করতে পারছেন না এমন বহু শিল্পপতি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। যা দেশের রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতা বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে আটকে থাকা সড়ক ও মহাসড়ক সংলগ্ন জায়গাগুলো ফিরিয়ে এনে শিল্প প্লট হিসেবে প্রকৃত শিল্পপতিদের কাছে দেয়া যায় কিনা তা সরকার পরীক্ষা করে দেখতে পারে। যদি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সম্পন্ন করা যায় তাতে জায়গার অভাব ঘুচবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই শেখ হাসিনার অর্জন অস্বীকার করেন : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধনাটকের শিল্পীত চেতনায় জীবন সত্য প্রকাশে প্রত্যয়ী