স্বজনের খুনে হাত রাঙাচ্ছে প্রিয়জন। স্বামীর ওপর অভিমান করে স্ত্রী হচ্ছেন আত্মঘাতী। প্রিয় সন্তানকে খুন করছে মা কিংবা বাবা। আবার সন্তানের হাতেই খুন হচ্ছেন তারা। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, পারিবারিক বন্ধন নড়বড়ে হয়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। এ গুলো সংস্কারে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের মতে পারিবারিক কলহ বিরোধে ঘরের ভেতর খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের পক্ষে এ সব বন্ধ করা সম্ভব না। এ জন্য পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো জরুরি। পারিবারিক কলহে খুনের ঘটনায় আসামিরা ধরা পড়ছে। দ্রুত মামলায় তদন্তও শেষ হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতাই পারে পরিবারিক ও সামাজিক অপরাধ রোধ করতে। তাই কমিনিউটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এ সব অপরাধ রোধ করতে কাজ করছে পুলিশ।
সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং হতাশার কারণে পারিবারিক কলহ-বিরোধ বাড়ছে। তরুণদের সামনে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক আদর্শ নেই। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এগুলো সংস্কারে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় করতে হবে। বিকৃত মানসিকতা, মানসিক বিষণ্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে প্রিয়জনের হাতে প্রিয়জনের হত্যার ঘটনা বাড়ছে।
গত ১৬ আগস্ট পটিয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের গুলিতে এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ধরার পরার পর র্যাব সদস্যরাও আশ্চর্য হয়ে গেছেন যে, গ্রেপ্তার ছেলেটির মধ্যে মাকে হত্যার ব্যাপারে এতটুকু অনুতাপ বা দুঃখবোধ নেই! মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে উপজেলা সদরের সামজার পাড়া নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দুপুরে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া লাগে মাঈনুরের। এ সময় মাকে মাথায় গুলি করেন তিনি। নিহত জেসমিনের অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিলো। মাঈনুরের সন্দেহ ছিলো সব সম্পত্তি বিক্রি করে মা বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন। তার বাবা শামসুল আলম মাস্টার দীর্ঘদিন পৌর মেয়র ছিলেন। গত মাসে তিনি মারা গেছেন।
গত ৮ আগস্ট নগরীর আকবর শাহ থানায় চুরির অভিযোগ পেয়ে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে মায়ের বেদম পিটুনিতে ছেলে হাছানের মৃত্যু হয়েছে। পরে খুনের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে ঠান্ডা মাথায় ছেলের মৃত্যুকে আত্মহত্যায় রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করেন। ছেলের লাশ ঝুলিয়ে রাখেন বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে। এরপর প্রতিবেশি ও পুলিশকে জানায়, তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আর ছেলের মৃত্যুকে আত্মহত্যায় রূপ দেয়ার কাজে মাকে সহযোগিতা করেছে ওই ছেলের মামা। আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে হাছান দাবি করে মা। কিন্তু হত্যার ধরন দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
১৩ জুন ষাটোর্ধ্ব দাদীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে মামলার আসামি করা হয়েছে দুই নাতি ও পুত্রবধূকে। মহানগর আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী আলতাজ বেগম (৬৭)। সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে দ্বিতীয় মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ওলি উল্লাহর আদালত মামলা গ্রহণ করে পাহাড়তলী থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী আজমুল হুদা। মামলা সূত্রে জানা গেছে, টিপু, সাজ্জাদ ও তাদের মা শাহনাজ বিভিন্ন সময় বৃদ্ধা আলতাজ বেগমকে গালমন্দসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। গত ১ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে টিপু, সাজ্জাদ ও তাদের বৃদ্ধা মাকে গালমন্দ ও মারধর করেন।
২০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার চৌধুরীপাড়া শ্মশানের পাশে পারিবারিক কলহের জের ধরে মাকে হত্যার অভিযোগে ঘাতক ছেলেকে আটক করেছে রামগড় থানা পুলিশ। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টার সময় নিহতের বড় ছেলে মো: ইব্রাহিম (২৯) তার মা রহিমা বেগমের (৫৯) চুলের খোপা ধরে মাটিতে আছাড় মারলে ঘটনাস্থলে রহিমা বেগমের মৃত্যু হয়।
হাটহাজারীতে ছেলের হাতে মোহাম্মদ শাহ আলম (৫০) নামে এক বাবা খুন হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও নিহতের ছেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত শাহ আলম মাদক সেবন করার জন্য টাকা চাইতে গেলে পরিবারের সাথে ঝগড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে পুত্র জাহেদুল আলম ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো দা দিয়ে শাহ আলমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে গুরুতর আহত হন।
২০২১ সালে ২২ ডিসেম্বর কঙবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় মা ও দুই মেয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি শহিদুল হক তার স্ত্রী জিসান আক্তারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শহিদুল তার স্ত্রীকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। এ ঘটনা দুই কন্যা সন্তান দেখে ফেলায় তাদেরকেও হত্যা করে পালিয়ে যান শহীদুল। এরপর এই ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালান তিনি।
২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে ছেলের হাতে বাবা খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটা সেবক কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছেলে বাবাকে নেশা করতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটে।
শুধু হত্যার ঘটনা-ই নয়, পারিবারিক কলহে ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনাও। মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ধূম ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুম গ্রামে বিয়ের পরও শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় রূপনা দাশ (৩৩) নামে এক গৃহবধূ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছেন। ১৯ জুলাই ভোরে চমেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ফটিকছড়ির ভূজপুরে নিখোঁজের একদিন পর পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত অন্তরা দে (৩২) উপজেলার নারায়ণহাট এলাকার টিটু গুপ্তের স্ত্রী। ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে উপজেলার উত্তর জোসখোলা পদ্মাপুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে যিশুর সঙ্গে বিয়ে হয় অন্তরার। তাদের একবছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া হয় অন্তরার। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। একদিন পর শনিবার সকালে স্থানীয়রা বাড়ির পাশের একটি পুকুরে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।