এই মেঘ, তোমরা এমন ছুটোছুটি করছ কেন? কই যাও তোমরা এমন করে? আমাদের বাড়ি আসতে পারো না তোমরা? এই দেখো আমাদের ঘর। এউ যে আমাদের সাদা উঠোন। এই যে আমাদের গাছ, পুকুর আর ফসলের মাঠ। তোমরা চলে আস আমাদের বাড়ি। বসতে দেবো পিঁড়ি আর খেতে দেবো মুড়ি।
একদিন এক টুকরো মেঘ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে একটি ছোট মেয়ে হাত বাড়িয়ে কী যেন বলছে। মেঘটি বলল, তুমি কে গো, কার সাথে কথা বলো তুমি?
বারে আমাকে চেননা বুঝি? আমি খুকী। আমিই তো কথা বলি তোমাদের সাথে। তোমরা আমার কথা শুনতে পাও না? আমি না প্রতিদিন কথা বলি তোমাদের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে, বলল খুকী।
মেঘ বলে, তুমি তো খুব ভালো একটা মেয়ে। মজা করে কথা বলতে পার দেখি। কী কথা বলো তুমি খুকী?
খুকী অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলে, দেখছ না আমার যে কোন সাথী নেই। মা–বাবা সারাদিন কাজ করে। এ বাড়িতে আমি একদম একা। বাড়ি–ঘর নেই আশপাশে। আমি কারও সাথে কথা বলতে পারি না, খেলতে পারি না। এখন বুঝতে পারছ কত বড় দুঃখ আমার?
মেঘের খুব মায়া হলো। সে মায়া করে বলল, ইশ্, ঠিকই ত তোমার অনেক দুঃখ। এখন কী করতে পারি আমি?
খুকী আবদার করে বলল, আমি তোমাদের সাথে খেলা করব আর ঘুরে বেড়াব আকাশে। আমাকে নিয়ে যাবে মেঘ ভাই তোমাদের দেশে?
মেঘ চোখ বড় করে বলে, তোমার তো পাখা নেই। কীভাবে যাবে তুমি আকাশে?
খুকী সাথে সাথে বলে, তোমারও তো পাখা নেই। তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও কীভাবে? মেঘ ডানে–বামে তাকিয়ে দেখে, ঠিক কথাই বলেছ খুকী। খুকী লাফিয়ে বলে আমাকে নিয়ে চলো না মেঘভাই তোমাদের দেশে। আমি তোমাদের সাথে থাকব, ঘুরব, খেলা করব। কত মজা হবে তখন!
মেঘটির মায়া হলো খুব। মেঘ বলল, কীভাবে যাবে শুনি?
কেন, তোমার পিঠে চড়ে! চটপট জবাব দিল খুকী।
তোমার তো বেজায় সাহস! বলল মেঘ।
খুকী বলল, ত?
মেঘ রাজি হয়ে গেল। বলল, খুকী তুমি কি আমার পিঠে বসতে পারবে? খুকী বলে, হ্যা খুব বসতে পারব আমি। মেঘটি আরেকটু কাছে চলে এলো। বলল, এবার লাফ দিয়ে বসে পড়ো আমার পিঠে। খুকী বলে আমি এত উঁচুতে উঠব কী করে? তুমি উঠোনে এসে বসো।
মেঘ বলে, আমি মাটি ছুঁতেও পারব না। মাটির ছোঁয়া লাগলেই আর আমাকে খুঁজে পাবে না। আমি পানি হয়ে মিশে যাব মাটিতে, তখন?
খুকী বলল, রাখো, আমি আসছি। খুকী দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এলো একটি জলচকি। খুকী জলচকির উপর পা রেখে এক লাফে চড়ে বসল মেঘের পিঠে।
মেঘটি খুকীকে নিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উড়তে লাগল আকাশের দিকে। খুশীর সীমা নেই খুকীর। মেঘটি উপরে উঠছে আর খুকী নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে বাড়ি–ঘর, গাছপালা, উঠোন, ফসলের জমি সব ছোট হয়ে আসছে। অনেক উপরে উঠে গেল মেঘ। খুকী দেখে উঠোনে দুটি মুরগিছানার মতো দাঁড়িয়ে আছে তার মা ও বাবা। খুকী একটুও ভয় পেল না। সে সোজা চলে গেল মেঘের মায়ের কাছে।
খুকীকে নিয়ে গিয়ে ছোট মেঘটি তার মাকে বলে, মা, মা, দেখো কাকে নিয়ে এসেছি। মেঘের মা খুকীকে দেখে অনেক খুশি হয়ে গেল। বলল, কেমন আছ তুমি? বাড়ি কই তোমার? খুকী অনেক কথা বলল মেঘের মার কাছে। মেঘের মা খুকীর নাক টিপে দিয়ে বলে ‘পাকনা বুড়ি’।
খুকীকে পেয়ে সব মেঘেরা খুব খুশি। তারা তাকে নিয়ে এখানে সেখানে উড়ে বেড়ায়। আরেকটা মেঘ এসে বলে আমার কোলে বসো খুকী। সে ঘুরে আসে। আবার আরেকটা মেঘ তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় অনেক দূরে। সবাই আদর করে খুকীকে।
খুকী মেঘের মাকে বলে, আমি তো অনেক ঘোরাঘুরি করলাম। এবার আমাকে শোনাতে হবে মজার সব গল্প।
মেঘের মা বলে কী গল্প শুনবে পাকনা বুড়ি?
খুকী ঝটপট বলে ওঠে, তোমাদের বাড়ি কোথায়? কই থাকো? এসব গল্প শোনাও আমাকে।
মেঘের মা খুকীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল, আমাদের বাড়ি আকাশে, বাতাসে, নদীতে, পুকুরে, গাছে সবখানে। খুকী চোখ বড় করে বলে, ওরে বাবা! এতগুলো বাড়ি তোমাদের? তোমরা অনেক বড়লোক বুঝি? আমি তো তোমাদের খালি আকাশেই দেখি আর তো কোথাও দেখি না। সব খুলে বলো না মেঘ মা।
মেঘের মা বলল, আমরা হলাম পানি। বৃষ্টি হয়ে পড়ি মাটিতে। তারপর যাই নদীতে, তারপর সুরুজ মামার রোদের তাপে আমরা হয়ে যাই বাষ্প। তারপর বাতাসে ভেসে ভেসে উঠে পড়ি আকাশে। আমরা একজন আরেক জনের সাথে মিলে যাই। তারপর মেঘ হয়ে ঘুরে বেড়াই আকাশে। বুজেছ এবার?
খুকী হাততালি দিয়ে বলে কী মজা কী মজা। আমিও মেঘ হবো। আমি তোমাদের মতো মাটিতে, নদীতে, আকাশে–বাতাসে উড়ে বেড়াব। আমাকে মেঘ বানিয়ে দাও।
মেঘ মা বলল, মেঘ হতে হবে না। তুমিও আকাশে উড়তে পারবে।
খুকী বলল, কীভাবে আমি আকাশে উড়ব বলো না আমাকে।
মেঘের মা বলল, তোমার দুটি পাখা গজাবে। তারপর তুমি উড়তে পারবে আকাশে।
খুকী বলল, মানুষের কি পাখা গজায় নাকি? এত মিছে কথা বলো কেন তুমি?
মেঘের মা বলল, লেখাপড়া করলেই মানুষের পাখা গজায়।
তাই! তাহলে আমি অনেক অনেক পড়ব আর আমার পাখা গজাবে। তখন আমি উড়ে উড়ে চলে আসব তোমাদের কাছে। আমি বাড়ি যাব এখন।
খুকী মেঘের পিঠে চড়ে শোঁ শোঁ করে ফিরে এলো নিজের বাড়িতে। খুকীর ভাবনা একটাই।
পড়ালেখা করবে। পাখা গজাবে। আর উড়ে বেড়াবে আকাশে।