খিচুড়ি

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

পুষ্টিবিদগণ খিচুড়ির অনেক গুণকীর্তন করে থাকেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি বলকারক খাদ্য। যারা নিয়মিত খিচুড়ি খান তারা সুডৌল দেহের অধিকারী হয়ে থাকেন। খিচুড়ির মূল উপকরণ চাল ও ডাল। মিশ্রণ করা হয় অন্যান্য উপকরণও। এটি একটি মিশ্র খাদ্য। মিশ্র মানেই হলো খিচুড়ি। আমাদের বাংলা ভাষা এখন হয়েছে খিচুড়ি ভাষা। বিশ্ব অর্থনীতি হলো খিচুড়ি অর্থনীতি। মতবাদও খিচুড়ি। পোশাক, আচার সবই খিচুড়ি। এতে আমাদের সংস্কৃতি হয়েছে বৈচিত্র্যময়। শিল্পীরা খিচুড়ি সংগীত গান। এ সংগীত শুনে আমরা খিচুড়ি মানুষরা আমোদিত হই। ছেলেরা এখন পছন্দ করে খিচুড়ি মেয়ে। মেয়েরা করে খিচুড়ি ছেলে। টেলিভিশনে আমরা যে এখন ‘ম্যাগাজিন’ অনুষ্ঠান দেখি সেটা আসলে খিচুড়ি অনুষ্ঠান। ‘করোনা’র সাথে যুদ্ধ করবার জন্যে এখন চায়ের সাথে আদা, তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচি, জিরা মিশিয়ে খিচুড়ি চা খাচ্ছি। খিচুড়ির তাই বদনাম করবার উপায় নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা সব কিছু ‘জগাখিচুড়ি’ করে ফেলি। জগাখিচুড়ি কান্ড কারখানা দেখে তাই হতবাক হতে হয়।
চিকিৎসকরা এখন আর রোগীদের রোগ ধরতে পারেননা। রোগীর কাছ হতে রোগের বিবরণ শুনে মনে হয় এ রোগীর সব ধরনের রোগই হয়েছে। এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট নাম চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। এর নামকরণ শুধুমাত্র করা যায় খিচুড়ি রোগ। কবিরা খিচুড়ি ছন্দে কবিতা লেখেন। গল্পকারদের গল্পও হয়ে গেছে খিচুড়ি গল্প। আমাদের ফিল্মে হাসি, কান্না, প্রেম, বিরহ, যুদ্ধ, হত্যা সব কিছুই আপনি খুঁজে পাবেন। ডি. এল. রায়তো অনেক আগেই বলে গেছেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। এ দেশকে বলা হয় ষড়ঋতুর দেশ। ছেলেবেলায় দেখা ষড়ঋতুকে এখন আর দেখতে পাইনা। এটা এখন খিচুড়ি ঋতু হয়েছে। সংসারটা হয়ে গেছে খিচুড়ি সংসার। এরপরেও বলবো খিচুড়ি একটি উপাদেয় খাদ্য। এ খাদ্য খেয়ে দিন দিন আমাদের বল বৃদ্ধি হচ্ছে। শৈশবে খিচুড়ি খেয়েছি। বার্ধক্যেও খাচ্ছি। বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, চেহারা দেখে নাকি মানুষ চেনা যায়। একালের খিচুড়ি মানুষের চেহারা দেখে চেনা যায় কী? আমার স্ত্রী রেগে গেলে বলে, তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। আমি মনে মনে হাসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের দুরবিনে
পরবর্তী নিবন্ধকালঘুম