খালে বাঁধ দিয়েছে চসিক

অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ জুন, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রসহ সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে খালে বাঁধ দিয়েছে সিডিএ। এসব বাঁধের কারণে অল্প বৃষ্টিতেও ডুবছে শহর। সর্বশেষ তিন দফা জলাবদ্ধতার জন্যও বাঁধগুলো অপসারণ না করাকে দায়ী করা হয়েছিল। এর আগে বাঁধ অপসারণে একাধিকবার সিডিএ’কে সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেন মেয়র। এমন পরিস্থিতিতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযোগ করছেন, শহরের বিভিন্ন খালে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেছে চসিক। কাজের সময় চসিক বাঁধ দিয়েছে। পরবর্তীতে বাঁধগুলো অপসারণ করা হয়নি। এতে পানি আটকে যাচ্ছে। ফলে আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। বিষয়গুলো সিটি কর্পোরেশনকে লিখিতভাবেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এছাড়া ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ প্রকল্পের আওতায় চাক্তাইসহ শহরের মোট ১২টি খালের মুখে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির কাজ করতে গিয়েও খালে বাঁধ দিয়েছে সিডিএ। প্রকল্পটির পরিচালককেও বাঁধ অপসারণে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদীকে বলেন, কাজের সুবিধার্থে আমরা বিভিন্ন খালে রাস্তা তৈরি করেছিলাম। সেগুলো আমরা কেটে দিয়েছি। এরপরও গত বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি আটকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে আমরা সরেজমিন খালগুলো পরিদর্শন করি। তখন আমরা দেখেছি, বেশ কয়েকটি খালে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় সিটি কর্পোরেশন যেসব বাঁধ দিয়েছিল সেগুলো সরিয়ে নেয়নি। এজন্যই পানি আটকে যাচ্ছে। এরকম দুটো স্পটের তথ্য আমরা সিটি কর্পোরেশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছিও। আরো কিছু স্পট আমরা চিহ্নিত করেছি। সেগুলো তাদেরকে জানিয়ে দিব।
চসিক কর্তৃক খালে বাঁধ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমরা তো খালে কোনো কাজই করি নি। সেখানে বাঁধ কেন দিবো।
যেসব খালে বাঁধ আছে চসিকের : প্রথমিকভাবে হিজরা ও ডোমখালী খালে বাঁধ রয়ে গেছে বলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় চসিককে।
এতে বলা হয়, হিজরা খালের উপর কাপাসগোলা ব্রিজ এবং ডোমখালী খালের উপর পাঠানিয়াগোদা ব্রিজ সিটি কর্পোরেশ কর্তৃক নির্মিত হয়। ব্রিজগুলো নির্মাণের সময় মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ, ব্যবহৃত বালির বস্তা, ব্রিজের নিচে শাটারিং এর কাঠ রয়েছে। ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী সমূহের জন্য পানি আটকে যাচ্ছে।
পত্রে আরো বলা হয়, কাপাসগোলা ব্রিজের জন্য পানি আটকে যাওয়ায় কাপাসগোলাসহ পাঁচলাইশ এলাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতা হচ্ছে। একইভাবে পাঠানিয়া গোদা ব্রিজে পানি আটকে যাওয়ায় খালের আশেপাশের এলাকায় বিশেষ করে বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও আশেপাশের এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পত্রে ব্রিজের নিচের বাঁধ ও ব্রিজের শাটারিংসমূহ জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় পুরো এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে বহাদ্দারহাট নামার সময় ডাবল ড্রেন কালভার্ট রয়েছে। সেখানেও রয়ে গেছে বাঁধ ও নানা নির্মাণ সামগ্রী। এছাড়া বাকলিয়া তক্তার পুল এলাকায়ও একটি ব্রিজ করেছে চসিক। সেখানেও বাঁধের জন্য আশেপাশের এলাকায় পানি ওঠে গিয়েছিল সর্বশেষ বর্ষণে। পরে বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে মৌখিকভাবে জানানোর পর বাঁধ কেটে দিয়েছে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। এদিকে নোয়াখালের মুখে ব্রিজ করছে রেলওয়ে। সেখানেও বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে এ বাঁধটি কেটে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ১ জুন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকেও মেগা প্রকল্পের আওতায় দেয়া বাঁধ সরিয়ে নিতে বলেছিলেন মেয়র।
নোয়াখালে বাঁধ দিয়েছে সিডিএ : সিডিএ’র বাস্তবায়নাধীন ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য বাঁধ দেয়া হয়েছে নোয়াখালে। বাঁধটি কেটে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালককে দেয়া মেগা প্রকল্পের পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, শহরের ২নং গেইট, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, অক্সিজেন মোড়, শের শাহ, সেনানিবাস পুরো এলাকার বৃষ্টির পানি ত্রিপুরা, গুপ্ত, শীতলঝর্ণা, বামুনশাহী, মির্জা ও চশমা খালের পানি নোয়া খালের মধ্য দিয়ে নদীতে পড়ে। রেগুলেটর নির্মাণের জন্য নোয়াখালের পাশে যে ডাইভারশন খাল নির্মাণ করা হয় তার মুখে ৯০০ মিলিমিটার ডায়া তিনটি পাইপ বসানো ছিল। পাইপগুলো দিয়ে নোয়া খালের পানি নদীতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ পত্রে বলা হয়, নোয়া খালের পানি প্রবাহে নির্মিত ডাইভারশন খাল যদি ড্রইং-ডিজাইন অনুযায়ী নির্মিত না হয় পুরো এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে চলতি মাসের সর্বোচ্চ শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধপরিস্থিতি নাজুক হলে সারাদেশেই কঠোর লকডাউন