খালের বাঁধ অপসারণে অগ্রগতি কতদূর

নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে ৩ দিন পর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এসব অস্থায়ী বাঁধের কারণে পানি যেতে পারছে না। তাই অল্পবৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা হয়’। গত তিনটি বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতার সমস্যার জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ’কে দোষারোপ করে এভাবে বক্তব্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা। এমনকি সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বাঁধ সরিয়ে নিতে সিডিএ’কে ‘আল্টিমেটাম’ও দেয় চসিক। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ সিটি মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে বিভিন্ন খালে থাকা বাঁধগুলো অপসারণ করা হবে।

ওই হিসেবে বাঁধ অপসারণের নির্ধারিত সময় শেষ হবে আগামী শুক্রবার। অর্থাৎ তিন দিন সময় আছে। অথচ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি খালে বাঁধ রয়েছে। নির্ধারিত সময়কে সামনে রেখে এসব বাঁধ অপসারণে কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি। অবশ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়িত্বশীলরা বলছেন, যে সব খালের কারণে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী ওসব খাল থেকে দ্রুততম সময়ে বাঁধসহ মাটি অপসারণ করা হবে।

বাঁধের জন্য ভোগান্তি : আকাশে মেঘ নেই। বৃষ্টি হয়নি। এরপরও নগরের ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের সঙ্গীত সিনেমা রোডের পাশে কয়েকটি বাসাবাড়ির সামনে পানি জমে আছে। একই সময়ে চট্টগ্রামহাটহাজারী রোডের আতুরার ডিপো থেকে হামজারবাগ এমআইভি পেট্টোলপাম্প হয়ে সেন্টার হল কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত কয়েকটি অংশে পানি জমেছিল। পানি জমে থাকার এ দৃশ্য দেখা গেছে গতকাল দুপুরে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হলেও সড়কে এবং বাসার সামনে পানি জমে থাকার বিষয়টি এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে।

সাধারণত ভারী বর্ষণ হলে এখানে পানি জমত। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়াই পানি জমে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম ত্রিপুরা খাল। এ খালে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় চলছে উন্নয়ন কাজ। কাজের সুবিধার্থে খালে দেয়া হয়েছে বাঁধ। মূলত এ বাঁধের কারণেই পানির স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তাই রাস্তার উপর বা বাড়ির সামনে পানি জমে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে লোকজনের।

হাটহাজারী রোড ও বিভিন্ন বাসাবাড়ির সামনে পানি জমে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ত্রিপুরা খালের এমআইভি পেট্টোল পাম্পের সামনে, রামগঞ্জ এলাকা এবং সঙ্গীত সিনেমা রাস্তার পাশে তিনটি বাঁধ দেয়া হয়েছে। খালটি ১৬ ফুট প্রশস্ত। অথচ পানি যাওয়ার জন্য বাঁধ দিয়ে ২৪ মিটারের পাইপ দেয়া হয়েছে। যা পানি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত না। ফলে আশেপাশে পানি উঠে যাচ্ছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকে ইফতারের পর পর্যন্ত সময়ে হাটহাজারী রোডে পানি উঠে যাচ্ছে। আজকেও (গতকাল) চট্টগ্রামহাটহাজারী রোডের আতুরার ডিপো থেকে হামজারবাগ এমআইভি পেট্টোলপাম্প হয়ে সেন্টার হল কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত পানি ছিল।

এদিকে চশমা খালেও বাঁধ দেখা গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরের মুরাদপুর মোড়ে চশমা খালের উপর চলছে একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ। কাজের সুবিধার্থে চশমা খালে বাঁধ দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এর আগে একই খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য বাঁধ দেয়া হয়েছিল। সে বাঁধও এখনো অপসারণ করা হয়নি। এছাড়া চাক্তাই খাল, ত্রিপুরা খাল, ডোমখালী খাল এবং মহেশখালী খালসহ কয়েকটি খালে প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে দেয়া বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের জন্য বিভিন্ন্‌ ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি জমাটবদ্ধ থাকায় সেখানে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। এতে নগরে বাড়ছে মশার উপদ্রবও।

বাঁধ নিয়ে চসিকের ক্ষোভ : সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে সভায় ৩১ মার্চের মধ্যে বাঁধ অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা যদি বাঁধ অপসারণ না করে এবং এসব বাঁধের জন্য জলাবদ্ধতা হয় তাহলে তার দায় সিডিএ’কে নিতে হবে। তারা যদি মাটি না তুলে তাহলে প্রেস কনফারেন্স করে সেটা জনগণকে জানিয়ে দেব। জানা গেছে, গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায়ও বাঁধ অপসারণ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন চসিকের একাধিক কাউন্সিলর। এর আগে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

বাঁধ অপসারণ হবে ? : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর আমরা মে মাস পর্যন্ত কাজ করি। এ বছর তার আগেই সব ক্লিয়ার করে ফেলব। যে সব খাল জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে সেগুলো দ্রুততার সাথে পরিষ্কার করে দিচ্ছি। সেখান থেকে বাঁধও তুলে ফেলছি। এ বছর খালে মাটির জন্য পানি আটকাবে না। খালে কোনো প্রতিবন্ধক আমরা রাখছি না। চাক্তাই খাল প্রায় ক্লিয়ার আছে। একটা জায়গায় বাঁধ আছে সেটা ৩১ মার্চের মধ্যে তুলে ফেলব। এরপর কোনো বাঁধ ও মাটি থাকবে না। চশমা খাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুরাদপুরের কালভার্টের বেইসটা করে ফেলতে পারলে সাথে সাথে পানি ছেড়ে দিব। বাঁধও ছেড়ে দিব। এছাড়া মহেশখালী খালের ফইল্যাতলীতে ক্লিয়ার করতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজানের অবিচ্ছেদ্য অংশ নামাজে তারাবিহ্‌
পরবর্তী নিবন্ধকাভার্ডভ্যানে সিএনজি স্টেশন