খালেদার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা

অবস্থা স্থিতিশীল, অনুমতি পেলেই পদক্ষেপ : ডা. জাহিদ

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির বাইরেও বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আছে। অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। যদিও তাঁর চিকিৎসক তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, নানামুখী সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে সরকার অনুমতি দেওয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া যায়।
এদিকে সরকারের অনুমতি পেলেই খালেদাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গত রাতে ঢাকার বসুন্ধরায় এভার কেয়ার হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। খালেদার অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে জানান তিনি। খবর বিবিসি ও বিডিনিউজের।
যে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়নি : খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য সরকারের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টিতে তার পরিবার ও দল অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতেই খালেদার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিদেশ যাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সরকার বিষয়টি ইতিবাচক ও মানবিক দৃষ্টি দেখার কথা বললেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। সরকারের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, আবেদনে উল্লেখ করা মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পাসপোর্ট নবায়ন : খালেদার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। এরপর আর নবায়ন করা হয়নি। দুদিন আগে তার পক্ষে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। দেশে এখন নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া সীমিত করে আনা হয়েছে।
বিএনপির এক নেতা জানান, ই-পাসপোর্ট করানোর জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের স্ক্যান ও ডিজিটাল স্বাক্ষর সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষ এগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে তার ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করে কর্তৃপক্ষ তাকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধ : খালেদার পরিবার তাকে প্রথম লন্ডনে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে সেদেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তার পরিবারের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন।
লন্ডনের বিকল্প হিসাবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সিঙ্গাপুর। এখন সৌদি আরব সুবিধাজনক কোন দেশ হতে পারে, তেমন বিকল্প দেশের কথাও তার পরিবার এবং দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ মানার নিয়ম রয়েছে।
ঢাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্য বা সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কোনো সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন।
দীর্ঘ বিমান যাত্রা নিয়ে সংশয় : খালেদার বয়স ৭৬ বছর। তিনি কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে এখনকার শারীরিক অবস্থায় তিনি বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান পরিবারের একজন সদস্য। তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষনীয়ভাবে ঘটছে না। প্রায় সব ক্ষেত্রে অবস্থা আগের মতোই থাকছে। সেজন্য তার বিমানে দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। লন্ডনের যাওয়ার মতো দূরের যাত্রার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে তারা আবারও সব কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেফাজত নেতা ফয়েজীর বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় ধর্ষণ মামলা
পরবর্তী নিবন্ধপঁচিশে বৈশাখ আজ কবিগুরুর জন্মদিন