খাবার নিয়ে বিরোধের জেরেই বোয়ালখালীর হেফজখানার মাশফিকে হত্যা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ জুন, ২০২২ at ৯:৪৪ অপরাহ্ণ

বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে আল্লামা অছিউর রহমান হেফজখানা ও এতিমখানার নাজেরা বিভাগের ছাত্র ইফতেখার মালেকুল মাশফি (৭)। তার জন্য বাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠাত।

কিন্তু একই হেফজখানার দাওর বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থী মাশফির খাবার খেয়ে ফেলতেন। মাশফি বড়ভাইকে বিষয়টি জানান।

এই নিয়ে মাশফির বড়ভাই দুই শিক্ষার্থীকে ধমক দেন ও শিক্ষক মাওলানা জাফরকে এই বিষয়ে নালিশ দেন।

খাবারের বিষয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মাওলানা জাফর পুনরায় ধমক দেন। এই খাবারের বিরোধের জেরে ১৫ বছরের দুইজন শিক্ষার্থী মিলে মাশফিকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় ১০ বছরের দুইজন শিক্ষার্থী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পর মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা। শনিবার (১৮ জুন) রাতে হেফজখানা থেকে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার (১৯ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেফতার দুইজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল আহসান এসব তথ্য জানান।

গত ৫ মার্চ সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে চরণদ্বীপ দরবার শরিফ পরিচালিত আল্লাম শাহসুফি অছিয়র রহমান মাদরাসার দোতলায় স্টোররুম থেকে ইফতেখার মালিকুল মাশফি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইফতেখার মালিকুল মাশফি, একই থানার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ফকিরাখালী গ্রামের প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে। এ ঘটনায় মাশফির মামা মাসুদ খান বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার নাজমুল আহসান বলেন, মাশফি হত্যার ঘটনাটি ছিল একটি সূত্রহীন মামলা। মাদরাসায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় হেফজখানার তিনজন শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়, তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। হত্যার এক মাস পরে পুলিশ সদর দফতর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে। তদন্তভার পাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তিগত কোনো ক্লু নেই, মাদরাসার সব শিক্ষক ও ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গত ১৪ জুন পিবিআইয়ের একটি টিম মাদরাসায় গিয়ে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গত শুক্রবার (১৭ জুন) পিবিআই টিমের কাছে তথ্য আসে যে, একজন শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন এবং সে বিষয়টি জানাতে রাজি হয়েছে। অভিভাবকের মাধ্যমে শুক্রবার রাতে ১০ বছর বয়সী হেফজ বিভাগের ওই শিক্ষার্থীকে পিবিআই কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই শিক্ষার্থী জানায়, তার সঙ্গে আরও একজন সহপাঠী ঘটনা দেখেছে। অভিভাবকের মাধ্যমে তাকেও এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই টিম।

তিনি বলেন, দুইজনের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১৮ জুন) রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুইজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একর্পযায়ে দুইজন হত্যায় জড়িত বলে স্বীকার করে। রোববার (১৯ জুন) সকালে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা ছুরিও মাদরাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও দুইজন প্রত্যেক্ষদর্শী সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাত ৮টার পর দোকান বন্ধ কাল থেকে
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু