খানাখন্দে ভরা ব্যস্ততম দুই সড়ক

কাদাপানির সঙ্গে আছে ধুলোর যন্ত্রণা, সংস্কার করতে সিডিএকে চসিকের চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

শেষ কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। এরপরও বিশাল আকারের গর্তে জমে আছে পানি। এ দৃশ্য শহরের ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের বন্দরটিলা এলাকায়। সড়কটির বন্দরটিলা থেকে মাইলের মাথা পর্যন্ত দুই পাশেই একই অবস্থা। সেখানে রাস্তার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি থেকেই জমে আছে পানি। বিমানবন্দর সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে শেখ মুজিব রোড। করুণ অবস্থা সড়কটিরও। এ সড়কের বিভিন্ন অংশের খানাখন্দেও জমে আছে পানি। তবে যেখানে পানি ছিল না সেখানে ছিল ধুলোর যন্ত্রণা।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুটি তথা বিমানবন্দর সড়ক ও শেখ মুজিব রোডের এ বেহাল দশার জন্য প্রতিদিন ভুগতে হচ্ছে পথচারি এবং বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের। এখানে ভাঙা সড়কে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। এতে নষ্ট হচ্ছে সময়। বিমানযাত্রীসহ অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে পারছে না গন্তব্যে। এছাড়া গর্তে পড়ে গাড়ি ওল্টে যাওয়াসহ প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে থাকা শহরের ব্যস্ততম সড়ক দুটির এ ভগ্নদশার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান নির্মাণ কাজকে দায়ী করা হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বা স্প্যান স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এরপর পিলার স্থাপন হলেও গোড়া ভরাট না করায় চতুর্দিকে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ধীরে ধীরে যা বড় হয়েছে। ফলে নষ্ট হয়েছে সড়ক। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সড়ক সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে গত রোববার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএকে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে থাকার কারণ খুঁজতে আজ মঙ্গলবার সিডিএর একটি টিমের পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত সিডিএ চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, জনস্বার্থে পতেঙ্গা থেকে দেওয়ানহট পর্যন্ত এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সিডিএ। নির্মাণ কাজের জন্য সড়কপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় যানজট লেগেই থাকে। ফলে বিমানযাত্রীসহ অফিসগামী লোকজন যথাসময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এতে জনভোগান্তি বেড়েই চলেছে। চিঠিতে এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ সমাপ্তি শেষে তা সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সময়কালে জনস্বার্থে সড়কটির সংস্কার জরুরি ভিত্তিতে সিডিএর মাধ্যমে সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হয়।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষে সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিডিএর। এ জন্য এলিভেটেড এঙেপ্রেসওয়ে প্রকল্পে আলাদা বরাদ্দও আছে। তাই বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের এখতিয়ারও চসিকের নেই বলে এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন।
এ প্রকৌশলী বলেন, ফ্লাইওভারের গার্ডার ও পিলার করার সময় যে পাইলিং করা হয়েছে তা নালায় ফেলা হয়েছে। যা র্দীঘদিন পরিষ্কার না করায় নালা ভরাট হয়ে আছে। এতে বৃষ্টির পানি সড়কে আটকে আছে। তাছাড়া যেখানে গর্ত হয়ে আছে সেখানে অস্থায়ীভাবে হলেও সংস্কার করে দেয়া উচিত সিডিএর।
এ প্রসঙ্গে এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, আপাতত টুকটাক সংস্কার করা হচ্ছে। বর্ষার আগেই তো আমরা এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করেছি। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। বৃষ্টি কমলেই আমরা কাজ করে দিব। জনদুর্ভোগ যেন কম হয় সেটাকেই প্রাধান্য দিই আমরা।
পানি জমে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি জমে থাকার কারণ তদন্তে আমাদের একটি টিম সেখানে আগামীকাল (আজ) পরিদর্শন করবে। সাথে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। চসিকের চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ড্রেন করেনি। দায়-দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এখন চিঠি দিচ্ছে। তারা ড্রেন করলে রাস্তাটির এ অবস্থা হতো না। এ প্রকৌশলী বলেন, বছর দুয়েক আগেও সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুব বাজে ছিল। ওখানে আমরা পাইলিং কাজ শেষে কার্পেটিং করে দিয়েছি। এবার তো পানি জমেনি।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায় লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সর্বশেষ গত জুন মাসে প্রকল্পটির নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত করার কথা জানায় সিডিএ। পাঁচ ধাপে ভাগ করে চলছে প্রকল্পের কাজ। বিমানবন্দর সড়ক, শেখ মুজিব রোড ও সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের উপর এটা নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে বিমানবন্দর সড়ক ও শেখ মুজিব রোডে কাজ চলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত সিএমপির ট্রাফিক-বন্দর বিভাগের এক প্রতিবেদনে খানাখন্দের কারণ হিসেবে বলা হয়, এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ের কাজের প্রভাবে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না করা, সড়কের পাশের ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের অভাব, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গোড়া ভরাট না করা এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারণেও সড়কটি নষ্ট হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সড়কের ব্যারিস্টার কলেজ মোড়ে, ইপিজেড মোড়, ইপিজেড কাঁচা বাজার, বেসিটি মেডিকেল সার্ভিস ও চৌধুরী মার্কেটের পূর্ব পাশে, বে-শপিং এর কোনায় ইপিজেডের প্রবেশ মুখে, ক্যাফে খাজা হোটেলের সামনের পশ্চিম পাশে এবং সল্টগোলা থেকে ইপিজেডে যেতে নবনির্মিত সিডিএ মার্কেটের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ, লায়লা সিএনজি থেকে ঈসা খাঁ গেইট পর্যন্ত অংশ খানাখন্দ হয়ে আছে।
গতকাল সরেজমিন পরির্দশনে দেখা গেছে, সড়ক দুটির প্রায় পুরো অংশজুড়ে ওঠে গেছে কার্পেটিং। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ৩৯নং ওয়ার্ডের বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল মোড়, ইপিজেড মোড়, মাইলের মাথা, সিমেন্স হোস্টেল অংশে সড়কের উভয় পাশে রাস্তার অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে। এখানে বড় বড় গর্তে জমে আছে কাদা পানি। বেশি পানি জমে আছে ইপিজেড এলাকায়।
বন্দরটিলা আলী শাহ মার্কেটের কাপড়ের দোকানদার আজমান আহমেদ আজাদীকে বলেন, ভাঙ্গা সড়কের কারণে সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে। ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বাস ড্রাইভার রহিম উল্লাহ বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে সড়কের এ বেহাল দশা হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম লেগে থাকে। গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। শহীদ নামে এক পথচারি জ্যামের কারণে গত সপ্তাহে বিমানবন্দর থেকে দেওয়ান হাট পৌঁছুতে আড়াই ঘন্টা লেগেছে বলে জানান।
এদিকে বন্দরটিলা-ইপিজেড অংশে বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগ এড়াতে বিভিন্ন অলি-গলি দিয়ে চলছে মিনি ট্রাক-বাস। ফলে বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন অভ্যন্তরীণ সড়কেও বেড়েছে যানজট। এমনই একটি বন্দরটিলা নয়ারহাট রোড। যাতায়াতের এই একমাত্র বিকল্প সড়কটিতে গতকাল সারাদিনই যানজট লেগে ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, শেখ মুজিব রোডের মাজার গেইট, সুলতান মার্কেটের সামনে পানি জমে ছিল। ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউটের সামনে ছিল ধুলোর যন্ত্রণা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টির সময় থাকে কাদা পানি। এখন ধুলোর দুর্ভোগ। একটি মোটরসাইকেল শো রুমের মালিক জানান, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে চারবার পানি ছিটিয়েছেন। এরপরও ধুলো কমছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজাদীর ৬৯ ও ৭৫ সালের দুটি কপি সম্পাদকের কাছে হস্তান্তর
পরবর্তী নিবন্ধস্কুল-কলেজ খুলতে না খুলতেই নগরজুড়ে চিরচেনা যানজট