ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা যখন বিশ্বজুড়ে, তখন আগামী অন্তত এক বছর বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপগুলো সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তারা।
সারে ভর্তুকি পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, আমন ধান নিয়ে উৎকণ্ঠা কেটেছে, বোরো নিয়েও কোনো শঙ্কা নেই। খাদ্য ঘাটতির কোনো শঙ্কা নেই দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন বলছেন, অহেতুক আতঙ্ক না ছড়ালে কোনো সমস্যা দেখছেন না তিনি। খবর বিডিনিউজের। মহামারীর পর যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি ভালো যাচ্ছে না। এই সংকট যে আগামী বছরও কাটছে না, সেই পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্ব সংস্থাগুলো। সহসা খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখনও সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা না গেলেও মূল্যস্ফীতি বহু বছর পর এখন ৯ শতাংশের উপরে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা খাদ্য সংকটের যে ঝুঁকির কথা বলছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে।
এই পরিস্থিতিতেও সঙ্কটের আশঙ্কা না করার কারণ দেখিয়ে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, এই সংকটের মধ্যে চাল-গমের আমদানি কম হলেও আমাদের বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। সাধারণত আমাদের দেশে কার্তিক মাসে খাদ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার বাড়েনি। এই মুহূর্তে মঙ্গা এলাকায়ও কোনো খাদ্য সংকট নেই। গত এক-দেড় মাসে চালের দাম বাড়েনি। আগে বেড়েছিল এটা সত্য, এখন চালের দাম স্থিতিশীল আছে। দাম বেশি আছে, কিন্তু স্থিতিশীল আছে। চালের বাড়তি দরে কিছু মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এর সঙ্গে দ্বিমত করছি না।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে আমন ফসলহানির যে শঙ্কা করা হচ্ছিল, তেমনটি না হওয়ায় হাঁপ ছাড়ছেন রাজ্জাক। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিকে বরং আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন তিনি।
তবে আমদানি করতে গেলে লাগবে ডলার, রিজার্ভে চাপ বাড়ায় তা এখন বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশে খাদ্যের আমদানি কম হলেও দেশের খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকা শক্তিশালী জোগান ব্যবস্থার ইঙ্গিত হিসেবে দেখাচ্ছেন রাজ্জাক।
সারা বিশ্বে ২৩০ ডলার থেকে আড়াইশ ডলারের মধ্যে প্রতি টন গম বেচাকেনা হলেও এখন সেটা ৫০০ ডলারের উপরে উঠে গেছে। সাধারণত গমের দাম বেড়ে গেলে চালের উপরে প্রভাব পড়ে। তখন চালের দামও বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতেও আমদানি কম।
বেসরকারিভাবে গম আমদানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার আমদানি বাজার বন্ধ হলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা খোলা আছে। তারপরেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই হয়ত চাহিদা মতো গম আমদানি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে দেশীয় জোগানের উপর চাপ বেশি পড়বে। সেজন্য সরকারিভাবে অতিরিক্ত ১০ লাখ টন চাল বেশি আমদানির পরিকল্পনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো ধীরে ধীরে দেশের বাজারে ঢুকছে। এর বাইরে রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া থেকে প্রতি মাসে দুটি করে জাহাজ আসতে থাকবে। এসব জাহাজের ৫০ থেকে ৫২ হাজার টন গম থাকবে। সবাই মিলে আমরা যদি পজিটিভ থাকি, আর পজিটিভ নিউজ যদি করি, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ খাদ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। গেল, গেল-গেল, আইলো-আইলো এ ধরনের আতঙ্ক যদি আমরা না ছড়াই, তাহলে আমার মনে হয় আমরা বাংলাদেশবাসী অনেক শান্তিতে আছি এবং শান্তিতে থাকব।