খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, পানছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা তিনটি ছাত্রাবাস ১৪ বছরেও চালু করতে পারেনি জেলা পরিষদ। এতে একদিকে যেমন পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত অন্যদিকে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ছাত্রাবাসের অবকাঠামো। জনবল সংকটের কারণে ছাত্রবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি দ্বিতীয় পর্যায়ের (পিডিইপি–২) আওতায় লক্ষ্মীছড়ি, পানছড়ি ও মানিকছড়িতে একটি করে মোট তিনটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। জেলা সদর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম এলাকায় নির্মাণ করা ছাত্রাবাসটি এখন পর্যন্ত চালু করা হয়নি বলে জানান লক্ষ্মীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার চাকমা। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন শতাধিক। তাদের বেশির ভাগই দুর্গম এলাকার বাসিন্দা। ছাত্রাবাসে ৪০ জন ছাত্র ও ৪০ জন ছাত্রী থাকার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। তবে এখনও চালু হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে। ছাত্রাবাস চালু হলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে।’
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তিন ছাত্রাবাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রতিটি ছাত্রাবাসে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য চেয়ার, টেবিল, খাটসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। ছাত্রাবাসে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি সৌর প্যানেলও স্থাপন করা হয়েছে।
ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীর হার কমছে বলে জানিয়েছেন মানিকছড়ির রাজবাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যজ মারমা। তিনি বলেন, ‘ছাত্রাবাসটি চালু হলে ভালো হতো। অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতো। আবাসিক সুবিধা থাকলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো। দুর্গম এলাকা থেকে বিদ্যালয়ে আসা অন্তত ২৫জন শিক্ষার্থী আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় অনেক খাট, পড়ার টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার দেখাশুনার ভার জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় আগে ছাত্রাবাসগুলো দ্রুত চালু করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধ ছাত্রাবাসগুলো। লক্ষ্মীছড়ি ও পানছড়ির দুই ছাত্রাবাস সংস্কারে নতুন করে এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে ছাত্রাবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে। প্রতি মাসে জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা হলেও ছাত্রাবাসগুলো চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে সদ্য যোগদানকৃত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা রোধে ছাত্রাবাসগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ছাত্রাবাস চালু হলে সুবিধা পাবে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। যেসব ছাত্রাবাস বন্ধ রয়েছে সেগুলো পরিদর্শন করব। বন্ধ ছাত্রাবাসগুলো চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করব।’












