খাগড়াছড়িতে বৈসাবী হবে ঘরোয়া আকারে

থাকছে না র‌্যালিসহ নানা আয়োজন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের কারণে এবার পাহাড়ে হচ্ছে না প্রাণের উৎসব বৈসাবী। পাহাড়ি জনপদজুড়ে এবার করোনা আতঙ্ক। তাই এবার সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈসাবী উদযাপন হবে না। প্রতিবছর এপ্রিলের প্রথম থেকে পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এই উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত থাকত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। পাহাড়ের গ্রামীণ পল্লী থেকে শুরু করে জেলা সদর সবখানেই থাকত বৈসাবীর ছোঁয়া। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব এটি। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমা বিজু সম্মিলিতভাবে বৈসাবী উৎসব হিসেবে উৎযাপিত হয়ে আসছে। নতুন বছরকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হত। গত বছরের ৮ মার্চ করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বৈসাাবী উদযাপন হয়নি। এই বছরে আবারো করোনা সংক্রমণ বাড়ায় বৈসাবী উদযাপনের প্রস্তুতি বাতিল করা হয়েছে। পারিবারিক আয়োজনে বিজু উদযাপন; তবে ঘরোয়া বা পারিবারিক আয়োজনে বৈসাবী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে শুরু হয় এই আয়োজন। এটি মূলত চাকমাদের বিজুর সূচনা পর্বের আয়োজন। ফুল বিজু, মুল বিজু এবং গয্যাপয্যা তিন পর্বে থাকে বিজুর আয়োজন। আদিবাসী নারী-পুরুষ, শিশু সকলের অংশগ্রহণে পাহাড় সাজে উৎসবের বর্ণিল রঙে। প্রতিবছর জেলা স্বনির্ভর এলাকায় খবং পরিয়ার পাড়ায় আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ফুল বিজুর। তবে অন্যান্য বছর সম্মিলিতভাবে গ্রামের মানুষ উৎযাপন করলেও তা এবার হচ্ছে না। ধর্মীয় রীতি বজায় রাখতে পারিবারিকভাবে এটি উদযাপন করা হবে। খাগড়াছড়ি খবংপুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বিজয়া খীসা জানান, প্রতিবছর দলবেঁধে আমরা ফুল ভাসাতে নদীতে যেতাম। করোনার কারণে এবার তা হবে না। ব্যক্তি উদ্যোগে বিজু ফুল, মাধবী, জবা, গাঁথা, রংগন, অলাকান্দসহ নানান বর্ণের ফুল-পাতায় সবুজ কলা পত্র করে ভাসানোর হয় নদীর জলে। পুরানো বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেই এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
এছাড়া বাসায় বাসায় রান্না করা হবে ঐতিহ্যবাহী পাজন। পারিবারিক আয়োজনে পাজন খেতে স্বজন ও বন্ধুরা একে অপরের বাড়ি বেড়াতে যাবে। তবে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। একই চিত্র থাকবে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে। ত্রিপুরা গড়িয়া নৃত্যে ঐতিহ্যের সুর বাজবে না এবার ; বৈসুর অন্যতম আকর্ষণ গড়িয়া নৃত্য। প্রতিবছরই বৈসুর হওয়ায় পাহাড়ের পাহাড়ে গ্রামে গ্রামে চলে গড়িয়া নৃত্য। গরয়া নৃত্যে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ে সুখ, আনন্দ ও সমৃদ্ধি কাব্যই ভেসে উঠে।
খাগড়াছড়ির নয়মাইল এলাকার মিলনকার্বারী পাড়ার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরার বাসিন্দারা সারা বছর বৈসু উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। তবে গত বছরের মতই এবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সেভাবে বৈসু উদযাপন করা যাবে না। করোনায় সবার আর্থিক অবস্থার ভালো না। হাতে টাকা পয়সা নেই। বৈসুতে খেলাধুলার আয়োজন করতাম কিন্ত তা এবার পারছি না। ঘরোয়াভাবে উদযাপন করব।
সংগঠনের শিক্ষা ও সাহিত্যিক বিষয়ক সম্পাদক চিংলামং চৌধুরী জানান, গত বছর করোনার কারণে সাংগ্রাই উদযাপন করতে পারিনি। তবে এবার উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে কিন্ত পরে তা বাতিল করেছি। তবে পারিবারিকভাবে সাংগ্রাই উদযাপন করা হবে। এবার জল কেলির আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুকুরে ডুবে কন্যা, খাল পার হতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধঅশ্লীল ছবির ভয় দেখিয়ে লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ৬