খাগড়াছড়িতে আমের ফলনে বিপর্যয়

কমেছে দুই কারণে, দুশ্চিন্তায় সাড়ে তিন হাজার বাগান মালিক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ জুন, ২০২২ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কমেছে। চাষিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার চার ভাগের এক ভাগ গাছেও আম আসেনি। লাভের আশায় ব্যাংক থেকে লোনসহ সুদে টাকা নিয়ে বছর জুড়ে সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এখন লাভ তো দূরে, দেনা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি আমবাগান মালিক। অনাবৃষ্টি আর কৃষি বিভাগের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে বলে জানালেন জেলার আম চাষিরা। অপর দিকে আম পরিবহনে জেলার বিভিন্ন সংস্থার ধার্যকৃত টোল কয়েক গুণ হারে বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে বাগান মালিকরা অভিযোগ করেছেন।
খাগড়াছড়ির আমচাষি হ্ল্যাশিমং চৌধুরী বলেন, বিষমুক্ত ও ফরমালিনবিহীন হওয়ায় খাগড়াছড়ির আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম সারা দেশে সমাদৃত। সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের আম্রপালি আমের খ্যাতি পাহাড় থেকে সমতলে ছড়িয়েছে। এছাড়া রাংগুয়া, আশ্বিনী, হিমসাগর, রত্না, মল্লিকা ও গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম খাগড়াছড়িতে উৎপাদন হয়। গত বছরও আম্রপালিসহ সব জাতের আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে এবার অন্য জাতের কিছু কিছু আমগাছে ফলন এলেও আম্রপালি গাছে আম আসেনি। বাগান মালিকদের অভিযোগ, বাগানের ফলন ভালো হলে বাহবা নেয় কৃষি বিভাগ। খাগড়াছড়ি ফলদ বাগান মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, কৃষি বিভাগ আমচাষিদের পরামর্শ দেয়নি। এমনকি তাদের সাথে কৃষকদের কোনো যোগাযোগ নেই। এছাড়া আম পরিবহনে জেলার বিভিন্ন সংস্থার ধার্যকৃত টোল কয়েক গুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে ফল বাগানীরা অভিযোগ করেছেন। এটাকে চাঁদাবাজি উল্লেখ করে এক্ষেত্রে টোল ইজারাদারদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি।
আমের ফলন বিপর্যয়ের জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশিদ আহমেদ বলেন, এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল। জানুয়ারির শুরুতেই অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে আমের মুকুল ঝরে যায়। পরে নতুন করে আর মুকুল আসেনি। এতে ফলন কম হয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সফি উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর ৩৭ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার তা কমে ২৮ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ফলন এবার কিছুটা কম।
এদিকে খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে আমকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে প্রায় ১১২ কোটি টাকার লেনদেন হবে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানি কম থাকায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে গলায় ফাঁস লাগিয়ে প্রবাসীর আত্মহত্যা