খরচ বাড়ল ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা

ভূমি অধিগ্রহণ, সেবা সংস্থার লাইন স্থানান্তর ও ডিজাইন পরিবর্তন বাড়তি ব্যয় একনেকে অনুমোদন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খরচ ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন স্থানান্তর এবং ডিজাইন পরিবর্তনে নতুন বিষয় সংযোজিত হওয়ায় ৩ হাজার ২শ ৫০ কোটি টাকার স্থলে ব্যয় ৪ হাজার ২শ ৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড়তি ব্যয় গতকাল একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে করে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাস্তবায়নাধীন লালখান বাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজে আর বাধা থাকল না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরীর যান চলাচলে গতিসহ নানা লক্ষ্য সামনে নিয়ে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও মূলত বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের বেশি ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে। বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। এই ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করে নতুন একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করে পতেঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
চারটি পৃথক ধাপে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় শুরুতে বিদ্যমান সড়কের উপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। বিদ্যমান সড়কের অন্তত ৩০ ফুট বাইরে দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ডিজাইন করা হয়। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন সাত একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন পাঁচ একর মিলে ১২ একর জায়গা হুকুম দখল করতে হচ্ছে। ভূমি হুকুম দখল এবং ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০০ কোটির বেশি টাকা খরচ বেড়ে গেছে, যা মূল প্রকল্পে ছিল না।
অপরদিকে পতেঙ্গা থেকে আসা এক্সপ্রেসওয়ে টাইগারপাস পাহাড়ের পাদদেশ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মূল ডিজাইন ওভাবে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পাহাড় কাটা এবং টাইগারপাসের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাহাড় না কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নতুন করে সমীক্ষা পরিচালনা এবং ডিজাইন পরিবর্তনের ব্যাপারটি সামনে আসে। সিডিএ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিএটিএস-এমআইএসটিকে দায়িত্ব দেয়। তারা টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলাকায় সার্ভে করে। যানবাহনের চলাচলের গতি-প্রকৃতি, গন্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দেওয়ানহাট থেকে ওয়াসা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করে নতুন ডিজাইনের প্রস্তাব দেয়। টাইগারপাস পাহাড়ের ক্ষতি না করে নতুন ডিজাইন তৈরি করা হয়।
নতুন ডিজাইনে বারিক বিল্ডিং থেকে আসা চার লেনের ফ্লাইওভার দেওয়ানহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডে নির্মিত ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এসে টাইগারপাস পার হয়ে বর্তমান সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের রাস্তার সামনে পৌঁছবে। চার লেনের এই ফ্লাইওভার পাহাড়ের দিকে না গিয়ে রাস্তার মাঝখানে থাকবে। পিলারও রাস্তার মাঝখানে হবে। সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছার পর চার লেনের ফ্লাইওভারের দুই লেন ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির আগে রাস্তায় নেমে যাবে, বাকি দুই লেন রাস্তার মাঝখান দিয়ে গিয়ে ওয়াসা মোড়ে বিদ্যমান আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে বিমানবন্দর রোড ধরে আসা গাড়িগুলো সড়ক পথে অল্পপথ গিয়ে প্রয়োজনে আবার ফ্লাইওভারে উঠবে কিংবা নিচ দিয়ে চলে যাবে। এই পয়েন্টে ফ্লাইওভারে ওঠা গাড়িগুলোর জন্য রাস্তা ডেডিকেটেড করে দেয়া হবে। অপরদিকে জিইসি মোড়ে পেনিনসুলা হোটেলের পাশ থেকে একটি র‌্যাম্প বিদ্যমান আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে যুক্ত করা হবে। নগরীর নিউ মার্কেট থেকে আসা রাস্তার সাথে টাইগারপাস মোড়ে একটি র‌্যাম্প ফ্লাইওভারে যুক্ত হবে। যাতে মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় এবং নিউ মার্কেট হয়ে আসা গাড়িগুলো ফ্লাইওভারে উঠতে পারে।
অপরদিকে আমবাগান রাস্তার মাথায় একটি র‌্যাম্প নামানো হবে। এছাড়া আগ্রাবাদসহ অন্যান্য লুব ও র‌্যাম্পের ডিজাইন অপরিবর্তিত থাকছে। নতুন এই ডিজাইনে টাইগারপাসের পাহাড় অক্ষত থাকবে। এই ডিজাইন করতে গিয়ে প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২শ কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ফ্লাইওভারে টোল প্লাজা, সিসি টিভি ক্যামেরা, লাইট, ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার, ড্রেন, ফ্লাইওভারের উপরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ আনুষাঙ্গিক কাজে দেড়শ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে।
বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাসের লাইন স্থানান্তরেও ২শ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলে ফ্লাইওভারের আগের ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার স্থলে বর্তমানে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় আগের ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। গতকাল নতুন করে প্রকল্পটির বাড়তি ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান গতকাল বলেন, প্রকল্পটির বাড়তি ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকল না।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটিতে বিভিন্ন সময়ে নানা সংকট ছিল। অবশেষে সব সংকটের অবসান ঘটেছে। বাড়তি ব্যয়ের অনুমোদন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধডলার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মানছে না ব্যাংকগুলো