খননের অভাবে মৃত ১০ বড় খাল

সংস্কারে বোরো আবাদ বাড়বে সীতাকুণ্ডের তিন হাজার হেক্টর জমির

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | রবিবার , ৫ মে, ২০২৪ at ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন (৪৩)। তার জমিতে বোরো চাষ করার প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা নেই। জমির আশপাশের শাখা খালগুলো মরে গেছে। তবে কাছাকাছি একটি বড় খালের পানি ওই এলাকার একটি ইরি গোলাতে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে ড্রেনের মাধ্যমে মোশাররফের জমিতে পানি আনতে খরচ হয় অনেক বেশি। তাই ইচ্ছা থাকলেও তিনি বোরো আবাদ করতে পারেন না। মোশাররফ হোসেনের মতো সীতাকুণ্ড উপজেলায় এমন অনেক কৃষক আছেন, বোরো মৌসুমে পানির অভাবে যাদের জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়, কৃষক ও সংশ্ল্ল্লিষ্ট ইউনিয়নের জন প্রতিনিধিদের মতে, খননের অভাবে এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত স্লুইস গেটের কারণে এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি খাল মরে গেছে। এগুলো খনন করা গেলে আরও প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আনা সম্ভব বলে তারা মনে করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয় বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর ও বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে। এই চার ইউনিয়নে রয়েছে ১০টি বড় খাল। খালগুলো হলো ডোমখালী খাল, বদর খাল, মহালঙ্গা খাল, বাঁকখালী খাল, অন্তর খাল, গুপ্তা খাল, মান্দারী টোলা খাল, কামানীয়া খাল, উলানিয়া খাল, গুলিয়া খাল। প্রতিটি খালের রয়েছে অনেকগুলো শাখা খাল। শাখা খালগুলোর পাশে রয়েছে মহালঙ্গা বিল, লালানগর বিল, বগাচতর বিল, বাঁকখালী বিলঅলিনগর বিল, হাতীলোটা বিল, নডালিয়া বিল, লক্ষণের বিল, গোপ্তাখালী বিল, ভাটেরখীল বিল, গুলিয়াখালী বিল। বড় বড় খালগুলোতে জোয়ারের সময় পানি থাকলেও শাখা খালগুলোতে পানি থাকে না।

উপজেলার পানি নিষ্কাশনে নদীকেন্দ্রিক ১০টি খাল রয়েছে। এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণের সঙ্গে চাষাবাদের পানি জোগানে কাজ করছে খালগুলো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন কাজ না হওয়ায় খালগুলো হয়ে উঠেছে কৃষকের গলার কাঁটা। এ অবস্থায় ভরাট ও দখলের কবলে পড়ে পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে খালগুলো জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা বলেন, বর্ষায় পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটে ঢুকে পড়ে ছড়া ও খালের পানি। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ লাভ করায় বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। এ ছাড়া জমে থাকা পানিতে আবাদি জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে প্রতিটি এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এই সমস্যার সমাধান নেই বলে জানান তারা।

বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের মহালঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল আউয়াল শরীফ জানান, তার জমিতে সেচের জন্য খাল থেকে পানি তুলতে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে সেচকাজ মারাত্মক ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, এই শাখা খালগুলো খনন করতে পারলে এ অঞ্চলে বোরো ধান আরও ভালো হবে। সরকার যদি এদিকে একটু নজর দেয় তাহলে চাষবাদে অনেক সুবিধা হবে।

বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান জানান, তার ইউনিয়নের ৫টি খাল খননের অভাবে মাটি ও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। পাহাড়ি এলাকায় কৃষকরা ভালো ফলন করলেও উপকূলীয় এলাকায় অনেক বিল আবাদহীন পড়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে খননের উদ্যোগ নিলে এ এলাকায় ফলন বাড়বে।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যা মিয়াজী জানান, উপকূলীয় এলাকায় বেশিরভাগ জমি অনাবাদী পড়ে আছে। লবণাক্ততার কারণে কৃষকরা চাষ করার আগ্রহ হারাচ্ছে। এই এলাকার বড় বড় খাল খননের পাশাপাশি শাখা খালগুলো জরুরি ভিত্তিতে খনন করা প্রয়োজন।

বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, এখানকার খালের পানি লবণাক্ত হওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠে না। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এই তিন ইউনিয়নে বেশিরভাগ জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। তবে খানগুলো খনন করলে বোরো চাষ বাড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, সীতাকুণ্ডে মাত্র ১০ হেক্টর জমিতে বর্তমানে বোরা চাষ হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে খালগুলোতে পানি থাকে না। উপজেলার প্রতিটি খাল খনন করা গেলে আরও অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের আওতায় আনা সম্ভব। এতে অন্য ফসলের চাষও সহজ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাল-নালায় গৃহস্থালী বর্জ্য নাগরিক দায় কতটুকু?
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে সুপেয় পানির তীব্র সংকট