কয়েক দফা দাম বৃদ্ধির পরও স্থিতিশীলতা নেই বাজারে

| রবিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

অনেকের মতো আমাদেরও বলতে হচ্ছে, ‘জীবনটা এখন নিত্যপণ্যের মধ্যেই আটকে আছে। খাবার না খেয়ে তো আর থাকা যায় নাতাই অন্যান্য খরচ কমিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইই চালিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে। বেতনের টাকায় সংসার চালানো কঠিন। প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যেই পকেট ফাঁকা। শুরু হয় ধারদেনা।

 

নিকটাত্মীয়, পরিচিতজন ও বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকেই ধার করেছি। সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এখন কেউ ধারও দিতে চান না।’ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারে। আজাদী ও অন্য পত্রিকায় প্রকাশিত

সংবাদে বলা হয়েছে, এক মাস ধরে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারে অস্থিরতা চলছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বাড়ছে দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। পাশাপাশি খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও আটার দাম বেড়েছে।

দাম বাড়ার বিষয়ে এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, বাজারে ডিম বা মুরগির কোনো সংকট নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণেই মূলত বাজারে এমন

অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একদিনেই এমন অবস্থা করা হয়নি। ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লুটে নেওয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৯০ টাকা ছিল। ছোট দানার প্রতি কেজি মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাত দিন আগে ১৩৫

টাকা ছিল। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা।

পত্রিকায় বলা হচ্ছে, বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা দেখার কেউ নেই। মনে হচ্ছে, তদারকি সংস্থাগুলো অসাধু ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম বাড়াতে সুযোগ দিচ্ছে। আর নিত্যপণ্যের আগুনে দামে কপাল পুড়ছে ভোক্তার। তবে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের

পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রতিদিন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত বছরের মতো শিগগিরই ডিম ও ব্রয়লার মুরগির খুচরা বাজার, পাইকারি ও খামার পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।

বাজারে ডিম ও মুরগির দাম ঠিক কত হলে যৌক্তিক হবে, সেটি নির্ধারণ করা নেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সেই সুযোগও নেই। তবে সরকার যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে, সেসব পণ্যের দামে ক্রেতারা ঠকছেন কি না, সেটি নিয়মিতভাবে তদারক করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আসলে কয়েক দফা দাম বৃদ্ধির পরও স্থিতিশীলতা নেই বাজারে। আজ এটার দাম বেড়েছে তো কাল ওটার। বাজারে গেলে পকেট খালি তো হচ্ছেই, প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস না কিনেই ফিরতে হচ্ছে বাসায়। নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসাস্থল টিসিবির ট্রাকেও এখন হাহাকার। দিন দিন লম্বা হচ্ছে

ক্রেতাদের লাইন। ট্রাকসেলের বিষয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। ঠিক সময়ে ট্রাক আসে না। এলেও সবাই পণ্য পান না। প্যাকেজের কারণে কিনতে সমস্যা হয় কারো কারো। আবার প্রায়ই দেয়া হয় নিম্নমানের পণ্য। আলু পেঁয়াজের কোনোটাতে সমস্যা থাকবেই।’

স্বল্প আয়ের নাগরিকগণের নিমিত্তে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাউল ও আটা সরবরাহ করবার ওএমএসতথা খোলাবাজারে বিক্রয় ব্যবস্থা মাঠ পর্যায়ে কী প্রকারে চলছে, পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে তার করুণ চিত্র প্রতিদিন উঠে আসছে। সাধারণ বাজারে প্রাপ্ত চাউল ও আটার তুলনায় প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০

টাকা এবং সেই হিসাবে গড়ে তিন শত টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য বৃহৎ বিবেচ্যস্বীকার করতে হবে। কিন্তু তজ্জন্য যেরূপ সকাল থেকে ৫৬ ঘণ্টা সারিবদ্ধ থাকতে হয়, তা বেদনাদায়ক বটে।

করোনা পরিস্থিতিতে টানা দুবছর অর্থনৈতিক চাপের মুখে থাকা মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে তখন বাজারের আগুনে সরকারের সামান্য সহায়তা অসামান্য স্বস্তি দিতে পারে বৈকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে