ক্ষুধা সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি অংশের বসবাস এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মারাত্মক অপুষ্টি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে এবং প্রায় সব বয়সী মানুষের ওপরেই অপুষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে এবং তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অঞ্চলে ৭ কোটি ৯০ লাখ শিশু বা পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি চার শিশুর একজন খর্বাকৃতির সমস্যায় ভুগছে এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুর জীবন অকেজো হয়ে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ভয়াবহভাবে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও গত দশকে শিশুর খর্বাকৃতির সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে শিশুর জীবন অকেজো হয়ে পড়া ঠেকাতে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। এই অঞ্চলে জাতিসংঘের প্রধান কর্মকর্তা বলেন, ‘দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এই যে, কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও এই অঞ্চলের একটি অগ্রহণযোগ্য বড় সংখ্যক শিশু অব্যাহতভাবে কয়েক ধরনের অপুষ্টির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। এটা একটা ব্যাপক মানব ক্ষতি। কেননা অপুষ্টি এবং এর ফলে শিশুর দুর্বল মানসিক বিকাশের ভবিষ্যতে এই শিশুদের জীবনভর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’ এছাড়া মানব জীবনের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় এটা একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিতেও ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমন এক পরিস্থিতিতে ‘বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ’- এখবর সত্যি আনন্দের। গত ১৬ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকায় ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট গতকাল শুক্রবার চলতি বছরের যে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের স্কোর গতবারের ২০.৪ থেকে কমে ১৯.১ পয়েন্ট হয়েছে। এর ফলে ক্ষুধার মাত্রা বিবেচনায় বাংলাদেশ ‘মারাত্মক’ থেকে ‘সহনীয়’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। উল্লেখ্য, অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেঙ (জিএইচআই) বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক। এই সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হল শূন্য। আর সবচেয়ে খারাপ স্কোর হল ১০০ পয়েন্ট। স্কোর বাড়লে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি, আর কমলে পরিস্থিতির উন্নতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনে বাংলাদেশের পথপরিক্রমার অংশ হিসেবে অপুষ্টি মোকাবেলায় সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি, সংকল্প ও পদক্ষেপের কারণেই এসব উন্নতি সম্ভব হয়েছে। গতবারের মতোই এবারও সূচকে স্কোরের দিক থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারত (২৭.৫) ও পাকিস্তানের (২৪.৭) বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। সূচকে গত কয়েক বছর ধরে পিছিয়ে থাকলেও এবার নেপালের স্কোর সমান। তবে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে চেয়ে এগিয়ে আছে এখনও (১৬)। গতবারের মত এবারও ক্ষুধার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। আট দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান (২৮.৩)।
পুষ্টির বিপরীত অবস্থা ‘অপুষ্টি’- যার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় নানাভাবে : শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাড্ডিসার অবস্থা, ছয় বছর বয়সী শিশুর তিন বছর বয়সের ন্যায় খর্বকায় হয়ে থাকা, খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাবে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে দুর্বলতা, এবং স্থূলকায় হবার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা, অথবা সংকুচিত রক্তনালী নিয়ে ভুগতে থাকা ডায়াবেটিক বা বহুমূত্র রোগী- সবার মধ্যেই অপুষ্টির সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অপুষ্টির এই বিভিন্ন বহিঃপ্রকাশের পেছনে কিছু সাধারণ কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব: খাবারের নিম্নমান, মা ও শিশুর অপর্যাপ্ত যত্ন, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা এবং অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অপুষ্টি নিরসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও এটি সারা বিশ্বেই একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতিটি রাষ্ট্রকেই এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য এ সমস্যা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে, সন্দেহ নেই। এর কৃতিত্ব মূলত কৃষকদের। তারা যাতে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারেন, সেজন্য সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে এ সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং বেসরকারি প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ক্ষুধা সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, ক্ষুধা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে আগামীতে এ উন্নতির গতি আরও বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে