ক্রেতা চাইলে নেই, অভিযানে মিলল ডেঙ্গুর পর্যাপ্ত স্যালাইন

চার ফার্মেসিকে জরিমানা, দুই লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু সারাতে খুবই জরুরি একটি পথ্য ডিএনএস স্যালাইন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে স্যালাইনটির চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। কিন্তু সেই স্যালাইনের দেখা পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা। কৃত্রিম সংকট তৈরী করে বাড়তি মূল্য হাঁকাতে প্রয়োজনীয় এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ রেখেছে একটি অসাধু চক্র। ফলে দোকানে কিনতে গেলেই বলছে স্যালাইন শেষ, অন্যত্র দেখুন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সেবা প্রার্থীর অসহায় স্বজনদের। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে ডিএনএস স্যালাইনকে ঘিরে কৃত্রিম সংকটের এ চিত্রের দেখা মেলে। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী রোগী সেজে সেখানকার ওষুধের দোকানে গিয়ে ডিএনএস স্যালাইন চেয়ে পাননি। দোকানে কোনো স্যালাইন নাই বলে তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরক্ষণেই অভিযান চালিয়ে দোকানগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিএনএস স্যালাইন বের করে আনেন ম্যাজিস্ট্রেট। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরী করে মূল্য বাড়িয়ে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিতে এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। এদের কারণে ওষুধের বাজারে দেখা দিয়েছে বিশাল এক নৈরাজ্য। রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির খবর নানা মাধ্যমে জেনে ও ডিএনএস স্যালাইনকে কেন্দ্র করে ওষুধের বাজারের অচলাবস্থা নিরসনে গতকাল বিকেলে চমেক হাসপাতালের গেটের সামনের ফার্মেসিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। উপস্থিত ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফিন। এসময় কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম তাদের সহযোগিতা করে।

তল্লাশি চলাকালে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি ফার্মেসিতেই রয়েছে পর্যাপ্ত ডিএনএস স্যালাইনের মজুদ। এসময় চারটি ফার্মেসিতে পাওয়া যায় প্রায় দুই লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ। এসব কারণে সাহান মেডিকো নামের একটি ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা, সবুজ ফার্মেসিকে ১০ হাজার টাকা, ইমন মেডিকেল হলকে ২০ হাজার টাকা এবং পপুলার মেডিসিন কর্নারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পাশাপাশি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনের ভান্ডারি হোটেল এবং আল মঞ্জুর হোটেলকে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরির দায়ে প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ জরিমানা করা হয়।

ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য চলছে উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত আজাদীকে বলেন, অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রি এবং স্যালাইনের দাম বৃদ্ধিসহ কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনের ওষুধের দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর আগে রোগী সেজে সেখানে যান জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী। কোনো ওষুধের দোকানে তখন ডেঙ্গু রোগীর জন্য অতি জরুরি ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে সবগুলো দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন পাওয়া যায়। মূলত স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে চাইছে একটি সিন্ডিকেট।

ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অভিযানে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে এসব ওষুধ বিক্রি করছে ব্যবসায়ী। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে চারটি ওষুধের দোকানকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি খাবারের হোটেলকে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিষ্ঠান দুটি ব্যবসা করে যাচ্ছিল। তিনি আরো বলেন, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের বাজারে নজর রয়েছে প্রশাসনের। আইন অমান্য করে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআবেদন সংশোধনের সুযোগ আজ, করা যাবে নতুন আবেদনও