কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে, কখনো রাজধানীতে লুকিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না চান্দগাঁওয়ে মা–ছেলে হত্যাকাণ্ডের একমাত্র ঘাতক ফারুকের। টিভি সিরিয়াল সিআইডি ও ক্রাইম পেট্রল দেখে সে হত্যার কৌশল শেখে। গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশলও আত্মস্থ করে সেখান থেকে। কিন্তু র্যাব–৭ এর ট্র্যাকিং এড়াতে পারেনি কিছুতেই। গতকাল ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় ফারুক ঢাকা থেকে আকবরশাহ থানাধীন পাক্কার মাথা এলাকায় এসে অবস্থান নিলে ফারুককে আটক করে র্যাব–৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজের নেতৃত্বে একটি টিম। ফারুকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক স্বীকার করে, রাগের মাথায় ‘পাতানো বোন’ গুলনাহার বেগমকে খুন করেছে এবং খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় ছেলে রিফাতকেও খুন করেছে সে। সে একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব–৭ চান্দগাঁও কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব–৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল। মা ও ভাইয়ের হত্যাকারীকে আটকের বিষয়টি শুনে র্যাব–৭ কার্যালয়ে ছুটে আসেন নিহত গুলনাহার বেগমের মেয়ে ময়ুরী। ময়ুরী বলেন, ফারুক আমাদের ভালো চলা দেখতে পারত না। সে আমাদেরকে বলত, ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল সিআইডির মতো করে খুন করে লাশ প্যাকেট করে নোয়াখালী পাঠিয়ে দেব। ময়ুরীর নানার বাড়ি চকবাজার থানার ঘাসিয়াপাড়া এলাকায়। মা–ভাইয়ের খুনের পর তিনি তার খালা রোজী আক্তারের সাথে থাকেন। ময়ুরী বলেন, র্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা– তারা আমার মা ও ভাইয়ের খুনিকে আটক করেছে। আমি খুনির ফাঁসি চাই।
লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাবের একটি দল খুনীর অবস্থান শনাক্তে কাজ করছিল প্রথম থেকেই। খুনিও বাঁচার অনেক কৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু খুনী আমাদের ট্র্যাকিংয়েই ছিল। আরও আগেই তাকে আটক করা যেত। কিন্তু সে পাহাড় থেকে সরে গিয়ে রাজধানীতে ক্ষণে ক্ষণে তার অবস্থান বদল করছিল। আবার আমাদের দৃষ্টির আড়ালও হয়েছে।
র্যাব–৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, গুলনাহারের বাসায় সাত বছর ধরে থাকত ফারুক। তারা যৌথভাবে ব্যবসা করত। গুলনাহার বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতেন আর ফারুক সেগুলো বিক্রি করত। যৌথ ব্যবসার টাকা–পয়সা নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফারুক বিভিন্ন সময় গুলনাহার ও তার ছেলেমেয়েকে হত্যার হুমকি দিত। ঘটনার দিন সে বাসায় গিয়ে প্রথমে গুলনাহারকে খুন করে। এটি রিফাত দেখে ফেলায় তাকেও খুন করে।
তারেক আজিজ আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন করে ফারুক। প্রথমে চকবাজার এলাকায় গিয়ে রক্ত মাখা জামা নালায় ফেলে দেয়। পরে নিজেকে অসহায় পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে গ্যারেজে কাজ নেয়। সেখানে কিছু দিন থাকার পর ফের চট্টগ্রামে এসে বিভিন্ন মাজারে ঘুরে আত্মগোপন করে। পরে আবার ঢাকায় গিয়ে একটি গ্যারেজে কাজ নেয়। সমপ্রতি ফারুক চট্টগ্রামে ফিরে আসে।
প্রসঙ্গত: গত ২৪ আগস্ট চান্দগাঁও থানাধীন রমজান আলী সেরেস্তাদার বাড়ি এলাকায় একটি বাসায় গুলনাহার বেগম ও রিফাত নামে দুজন খুন হন। পরে এই ঘটনায় গুলনাহারের মেয়ে ময়ুরী বাদী হয়ে তার মায়ের পাতানো ভাই ফারুকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ময়ুরী জানান, বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়ার পর ফারুক তার মায়ের গায়ে হাত তুলত। এমনকি রিফাত ও তাকেও মারধর করত। ঘটনার আগে তারা এ বিষয়ে এলাকার লোকজন এবং ফারুকের মায়ের কাছে বিচার দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফারুক তিনজনকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার দু’দিন আগেও তার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল ফারুকের।