সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প আইন মেনেই হয়েছে : নাছির

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দায়িত্বপালনকালে বিপ্লব উদ্যানসহ নগরের যাবতীয় সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম আইনগত এখতেয়ারের মধ্যে সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ..ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করলেও প্রশাসনিক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এতে একদিকে শহরের সৌন্দর্য ও নাগরিক সুবিধা বেড়েছে, অন্যদিকে বিনিয়োগ ছাড়াই রাজস্ব পাওয়ার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন তিনি। জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ..ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে ৪২টি চুক্তি হয়। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর খোরশেদ আলম সুজন সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে ‘অনিয়ম’ অনুসন্ধানে আইন কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেন। গত ১৯ আগস্ট আইন কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বলা হয়, ‘চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এস্টেট (ভূসম্পত্তি) শাখা হতে কোনো নথি খোলা হয়নি। নগর পরিকল্পনা শাখার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদিত হলেও তাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে মর্মে কোনো রেজুলেশন পাওয়া যায়নি।’ সর্বশেষ ২৫ আগস্ট বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে প্রশাসক চুক্তির শর্ত লক্সঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র (২০১৫২০২০) ..ম নাছির উদ্দীন বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে। সেটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রের আইনগত এখতিয়ারের মধ্যে আছে। প্রশাসনিকভাবে এবং স্টেট বিভাগ থেকে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়েছে। তিনি বলেন, নাগরিকদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির জন্য, নিরাপদ ও সুন্দর শহর গড়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের আইনকানুন মেনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্প নিয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক অনুমোদনের মাধ্যমে তা বস্তবায়ন করেছি। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করা সিটি কর্পোরেশনের বৈধ এখতিয়ার রয়েছে। নিজস্ব উদ্যোগে যা যা করতে পারব সে আলোকে করেছি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। নিজস্ব অর্থায়নে সৌন্দর্যবর্ধন করতে গেলে প্রচুর অর্থ খরচ হতো। এখন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার ফলে সিটি কর্পোরেশনের বিনিয়োগ ছাড়াই অন্যের অর্থ দিয়ে করতে পেরেছি। এতে একদিকে নগরের সৌন্দর্য ও নাগরিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের কিছু আয়ও হয়েছে। যেমন আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব দিয়েছি। সেখানে লাইট জ্বললে যে বিদ্যুৎ বিল সেটাও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। তারা তো এই করোনার মধ্যেও ১২ লাখ টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছে। আবার সিটি কর্পোরেশনও রেভিনিউ পাচ্ছে।

বিপ্লব উদ্যান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইজারাদার যে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করেছে সেটা আমাদের আকৃষ্ট করেছে। যে কোনো মানুষ বিপ্লব উদ্যানে আসলেই তাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আকৃষ্ট করবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি একধরনের অনুভূতি তৈরি হবে। যে আসবে সে বঙ্গবন্ধুকে জানবে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে পারবে। এটা তো বড় একটা অর্জন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ছয় দফার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্মৃতিসৌধ আছে এবং ৫২ এর ভাষা আন্দোলনও আছে। কেউ প্রথমে আসা মাত্র দেখবে জয় বাংলা। সেখানে প্রতিদিন ছেলেমেয়েরা ভিড় করেন। বিপ্লব উদ্যান আগে কেমন ছিল? সেখানে হাঁটার পরিবেশ ছিল? ছিল না। এখন তে শত শত ছেলেমেয়ে হাঁটে। সৌন্দর্যবর্ধনের ফলে সেখানে হাঁটার পরিবেশ হয়েছে। নাগরিকদের বিনোদনের যেসব সুযোগসৃবিধা ও পরিবেশ পাওয়া উচিত সেগুলো নিশ্চিতেই তো সেখানে কাজ করেছি।

সাবেক এ মেয়র বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন করেছি বলেই শহর অনেক পরিচ্ছন্ন হয়েছে। যেমন সার্কিট হাউজের রাস্তাটা আগে কেমন ছিল, এখন কেমন হয়েছে? বিমানবন্দর থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এরিয়া, জামালখানসহ বিভিন্ন জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের ফলে পরিবর্তন এসেছে। পুরো শহরের মিড আইল্যান্ডগুলো আগে কেমন ছিল, এখন কী রকম হয়েছে? এসবই তো সৌন্দর্যবর্ধন। এখন সৌন্দর্যবর্ধন বাদ দিতে চাইলে তো সবগুলোই ভেঙে ফেলতে হবে। এতে তো আগের সেই অপরিচ্ছন্ন শহরে ফিরে যাব।

আপনার মেয়াদকালে নগরে যেসব সৌন্দর্যবর্ধন কাজ হয়েছে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এ প্রশ্নকে কি উদ্দেশ্যপূর্ণ মনে করেন? এমন প্রশ্নে আ..ম নাছির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। নগরবাসী বলবেন। সৌন্দর্যবর্ধনের কারণেই শহরের পরিবর্তন হয়েছে। নগরবাসী সুন্দর শহর পেয়েছেন। কাজেই তারা বলবেন। আমি কেবল একজন নাগরিক হিসেবে এবং আমার মেয়াদে হওয়ায় আমার অবস্থান তুলে ধরছি।

..ম নাছির আরো বলেন, পূর্বের মেয়রদের কার্যক্রম নিয়ে আমি কিছু করিনি। আমার আগে মনজু ভাই (মোহাম্মদ মনজুর আলম) ছিলেন, তার আগে মহিউদ্দিন ভাই (মহিউদ্দীন চৌধুরী) ছিলেন। কেউ কিন্তু কারো কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেনি। এমনকি মহিউদ্দিন ভাই তার পূর্বে যারা মেয়র ছিলেন তারা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হওয়ার পরেও করেননি এবং পূর্বের মেয়রদের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। অনুরূপভাবে আমিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু করিনি। বরং পূর্বের মেয়রদের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রাইম পেট্রল-সিআইডি দেখে হত্যার কৌশল শেখে ফারুক
পরবর্তী নিবন্ধমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনহীন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাতিল করা হবে : সুজন