ক্রমাগত কমছে রেমিটেন্স

দেড় বছরে সবচেয়ে কম অক্টোবরে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ক্রমাগত কমছে রেমিটেন্স। গত চারমাস ধরে প্রতি মাসেই কমছে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে মাত্র ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে কম ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবের আশংকা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের শুরু হয়েছিল রেমিটেন্স প্রবাহে ধসের মাধ্যমে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ডলার। যা আগের মাস তুলনায় প্রায় ৭ কোটি ডলার কম। এরপর থেকে ক্রমাগত কমছে রেমিটেন্স। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর পর্যন্ত ওই পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাই মাসে ১৮৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসলেও আগস্ট মাসে আসে ১৮১ কোটি ডলার। যা গত বছরের আগস্টের তুলনায় ১৫ কোটি ডলার কম। আগের বছর আগস্ট মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার।
আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স আরো কমে যায়। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। যা আগের মাসের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। সেপ্টেম্বরের ধারাবাহিকতায় অক্টোবরেও কমে যায় রেমিটেন্স। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা আগের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার কম।
গত চারমাস ধরে ক্রমাগত কমছে রেমিটেন্স। চার মাসের ব্যবধানে দেশে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ কমেছে ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই ধারা শেষতক কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে।
করোনাকালে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বেড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রেমিটেন্সে ধস নামতে শুরু করেছে। বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক অর্থনীতিবিদ। তারা বলেন, রেমিটেন্সের নেতিবাচক পরিস্থিতি দেশের সার্বিক অর্থনীতিকেই সংকটে ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকতা বলেছেন, করোনাকালে রেমিটেন্স নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন থাকলেও কার্যতঃ রেমিটেন্স বেড়েছিল। যা অনেককেই আশাবাদী করে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই সংকট প্রকট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে। তিনি বলেন, করোনাকালে বিমান যোগাযোগ বন্ধসহ নানা কারণে প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে পারেননি। সব টাকা এসেছিল বৈধ পথে। সরকার ২ শতাংশ করে প্রনোদনা দিয়েছিল। এর বাইরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি এক শতাংশ প্রনোদনা দিয়েছিল। যার সুফল মিলেছিল রেমিটেন্সে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠার সাথে সাথে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। যার ধকল দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. অধ্যাপক মইনুল ইসলাম হুন্ডি পরিস্থিতি অত্যন্ত চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রবাসীদের অনেকেই হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন। করোনাকালে হুন্ডি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা এসেছিল। এখন হুন্ডি শুরু হওয়ায় আবারো অনেকেই ওই পথে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হুন্ডিতে বিনিময় হার অনেক বেশি হওয়ায় প্রনোদনা দিয়েও প্রবাসীদের পুরো অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা যাচ্ছে না।
প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেন, অন্যদিকে করোনার সময় বহু প্রবাসী চাকুরি হারিয়েছেন। বহু প্রবাসী তাদের সমুদয় সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ নিয়ে দেশে এসেছেন। এতে আয় বেড়েছিল। দেশে আসা অনেক প্রবাসী কাজে যোগ দিতে পারেননি। আবার অনেকেই চাকুরি হারিয়েছেন। এতে তাদের আয় কমে গেছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এছাড়া হুন্ডির পাশাপাশি ওভার ইনভয়েসিংসহ নানা পন্থায় দেশ থেকে মুদ্রা পাচার শুরু হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনবীপ্রেমই খোদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত
পরবর্তী নিবন্ধসুস্থ হয়ে উঠছেন খালেদা : চিকিৎসক