ক্বণনের শ্রমনিষ্ঠ সাধনা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কেবল আবৃত্তি শিল্পেই নিবেদিত ছিল ক্বণন’র ৩৬ বছরের শ্রমনিষ্ঠ সাধনা। ১৯৯৭ সালের ১০ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ডা. আবু সাঈদ শিমুল ‘চট্টগ্রামে আবৃত্তি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্বণন’র আবৃত্তি চর্চার সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের সূচনা ও মূল্যায়ন বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যান্টিনে ২৯ জন আবৃত্তিপ্রেমীকে নিয়ে মোসতাক খন্দকারের প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আমরা আপাতত প্রথম আবৃত্তি কর্মশালা বলতে পারি। সবচেয়ে সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হন মোসতাক খন্দকার। আবৃত্তি বোধে, ধারণের ক্ষমতায় তিনি এ অঞ্চলের বর্তমান আবৃত্তিকারদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন প্রতিষ্ঠার তিনযুগ পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। আবৃত্তি অঙ্গনে শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত একটি নন্দিত নাম মোসতাক খন্দকার। এই নামের দীপ্তি চট্টগ্রাম, ঢাকা ছাড়িয়ে কলকাতায় পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন ৩৬ বছরে সাড়ে তিন সহস্রাধিক আবৃত্তি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। আবৃত্তি শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক শিক্ষা প্রাপ্তির সুবিধার্থে ক্বণন নিয়মিতভাবে কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে। শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি কর্মশালার আয়োজন করেছে ৭১টি।
আবৃত্তি শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ে আবৃত্তি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে থাকে ক্বণন। কাজী সব্যসাচী, গোলাম মুস্তাফা, নরেন বিশ্বাস, শামসুর রাহমান, প্রদীপ মজুমদার, কবিতা চট্টগ্রাম ইত্যাদি নামাঙ্কিত আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ২৬টি। এ ছাড়াও বৃন্দ আবৃত্তি ৬২টি এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছে ৭৭টি। আবৃত্তি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে ২টি। আবৃত্তি নিয়ে এই সর্বাত্মক কর্মকাণ্ডে ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন চট্টগ্রামে আবৃত্তি শিল্পের একটি পথিকৃৎ সংগঠন। ক্বণন তার অগ্রযাত্রার ২০, ২৫, ও ৩০ বছর অতিμমণকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৩টি আবৃত্তি উৎসবের আয়োজন করে।
২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৬ সালের ৬ ও ৭ জুলাই ক্বণন চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীতে আবৃত্তি উৎসবের আয়োজন করে। আল মাহমুদ, আসাদ চৌধুরী, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, দিলওয়ার হাসান, নাসিম আহমেদ, শায়লা আহমেদ প্রমুখ বরেণ্য কবি ও আবৃত্তিকার এই উৎসবে অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত রজত জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কবি মহাদেব সাহা, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি নির্মলেন্দু গুণ, ভারত থেকে আমন্ত্রিত কবি সুবোধ সরকার ও আবৃত্তি শিল্পী রোকেয়া রায়, আবৃত্তি শিল্পী-প্রশিক্ষক শফিকুল ইসলাম বাহার, কবি ভাস্কর চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী ও সংবাদ পাঠক শামসউজজোহা। এই উৎসবেই ক্বণন-কাজী সব্যসাচী-এ কে খান আবৃত্তি পুরস্কার প্রবর্তন ও প্রদান করা হয়। আবৃত্তি শিল্পী-প্রশিক্ষক ও গবেষক নাসিম আহমেদকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
২০১৬ সালে ৩০ বছর পূর্তি উৎসবে ক্বণন-কাজী সব্যসাচী-এ কে খান আবৃত্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় উপমহাদেশের কিংবদন্তী আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষকে। এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন এ কে খান গ্রুপের ডিএমডি এ এম জিয়াউদ্দিন খান, ভারতের স্বনামধন্য আবৃত্তি শিল্পী ও অভিনেতা সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, কাজী সব্যসাচী তনয়া খিলখিল কাজী, আবৃত্তি শিল্পী রোকেয়া রায়, আবৃত্তি শিল্পী বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ, কবি মৃদুল দাশগুপ্ত ও মন্দাμান্তা সেন।
৩৩ বছর পূর্তির আয়োজনে অতিথি ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, কবি সুবোধ সরকার ও আবৃত্তি শিল্পী সুতপা বন্দোপাধ্যায়।
৩৪ বছর উদযাপনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় কবি রামচন্দ্র পাল, আবৃত্তিকার শাশ্বতী গুহ। এভাবে অবশেষে করোনার ছোবলে সাংস্কৃতিক স্তব্ধতার ভেতর ৩৫ বছর কাটিয়ে ৩৬ বছর অতিμম করলো ক্বণন।
শুদ্ধ শিল্পের জন্য শুদ্ধতম প্রচেষ্টা- এ বিশ্বাসের প্রায়োগিক চর্চায় নিবেদিত ক্বণন পরিবারের একাগ্র সাধনা। আবৃত্তি শিল্পের বিকাশে এবং জনগ্রাহ্যতা সৃষ্টিতে ক্বণন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আবৃত্তি শিল্পের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে উজান স্রোতে হলেও ক্বণনের অবিচল যাত্রা অব্যাহত থাকবে। কোনো অজুহাতেই কিছুতেই শিল্পী ও শিল্পের বিভাজন ক্বণনের কাম্য নয়। ক্বণন মনে করে অনৈক্য অশুভ কিছুকে আহ্বান করে। শিল্পী যখন শিল্পের বিষয়চ্যুত হয় তখন শিল্পের আঙ্গিনায় অনাকাঙিক্ষত অনেক কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটে। ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন এই সংμামক ব্যধি থেকে মুক্ত থাকতে চায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতরুণ প্রজন্মকে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধমানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের র‌্যালি