রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ ইছামতী বড়ুয়া পাড়া সড়কের উন্নয়নে কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও গেল এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সংস্কার কাজ। এতে বেহাল সড়কটি দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও হাজার হাজার চলাচলকারী জনসাধারণের। ইতিমধ্যেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কার না হলে আগামী বর্ষায় সড়কটি দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইছামতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ইছামতী ধাতু রত্ন বিহার পর্যন্ত বড়ুয়া পাড়া সড়কের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। এটি রাঙ্গুনিয়া থানা সদর থেকে ইছামতী বড়ুয়া পাড়া গ্রাম হয়ে কাটাখালী যাওয়ার অন্যতম প্রধান সড়ক। তার ওপর বৃহত্তর বড়ুয়া পাড়া গ্রামের আনুমানিক এক হাজার পরিবারের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম এটি। এতদসত্ত্বেও ২০ বছর আগে একবার সংস্কার হওয়ার পর সড়কটির উন্নয়নে আর কোনো বরাদ্দ হয়নি। অযত্নে অবহেলায় জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন বেহাল দশায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। সড়কটি সংস্কারে বর্তমান পৌর প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সদ্য সাবেক পৌর কাউন্সিলর ওমর তালুকদার বলেন, সড়কটি সংস্কারে এক বছর আগে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু টিকাদারের অবহেলায় সড়কটি এখনো বেহাল পড়ে রয়েছে। এই নিয়ে আমি এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো সড়কটির কাজ ঠিকাদার ফেলে রেখেছে। জনস্বার্থে প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি ৮ নম্বর ওয়ার্ড সৈয়দবাড়ি থেকে ১০০ মিটার অংশ আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে। তবে এরপর থেকে পুরো বড়ুয়া পাড়া সড়কের বেহাল দশা। সড়কজুড়ে আরসিসি ঢালাই উঠে গিয়ে একরকম মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে সড়কের মাঝে। অনেক জায়গায় সড়কের পাশে ভেঙে ধসে পড়েছে। এর ওপর দিয়ে হেলেদুলে চলছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। তবে সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অসুস্থ রোগীসহ এলাকার মানুষকে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে তারপর গাড়িতে উঠতে হচ্ছে।
লিংকন বড়ুয়া নামে স্থানীয় একজন জানান, একুশে পদকে ভূষিত সাহিত্যিক বিপ্রদাস বড়ুয়া, সঙ্গীত শিল্পী পার্থ বড়ুয়ার জন্মস্থান এই ইছামতী গ্রাম। সম্প্রতি একুশে পদকে ভূষিত ড. জিনবোধি ভিক্ষুর ভিক্ষুত্ব জীবন শুরু হয় এই গ্রামের বৌদ্ধ মন্দির থেকেই। এখানে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি বৌদ্ধ ধর্মীয় বিহার, দুটি মসজিদ এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক অবস্থিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় গ্রামের প্রধান ও একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।
ইছামতী ধাতু চৈত্য বিহার কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী অমল কান্তি বড়ুয়া জানান, প্রায় দুই বছর পূর্বে জরাজীর্ণ সড়কটির প্রবেশমুখে আরসিসি ঢালাই এর কাজ শুরু করেও শুধুমাত্র ১০০ মি. ঢালাই সম্পন্ন করার পর বাকি প্রায় ১ কিলোমিটার পথ এখনো সংস্কারবিহীন পড়ে আছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া পৌর প্রশাসক মারজান হোসাইন বলেন, সড়কটি সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। সে কাজ না করে ফেলে রেখেছে। উপ–ঠিকাদার কাজ শুরু করলেও শেষ করেনি। এই ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে এবং দ্রুত সংস্কার কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।