কোটি টাকার গাড়ি কিনে নেয় কয়েক লাখ টাকায়

কাস্টমসের নিলামে সিন্ডিকেট রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল গাড়ির নিলামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট বা সংঘবদ্ধ চক্র। অভিযোগ রয়েছে, সেই সিন্ডিকেটটি কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি কয়েক লাখ টাকায় কিনে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে এক শ্রেণীর কাস্টমস কর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে বিক্রির অনুমোদনও নিচ্ছে তারা। এতে সরকার এই খাতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। গত মাসের ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-অকশন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৭৮টি গাড়ির নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে বিলাসবহুল গাড়ির জাপানের তৈরি একটি মিতসুবিশি জিপের দর উঠেছে মাত্র আড়াই লাখ টাকা। অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জিপটির দর হাঁকে ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৯২৪ টাকা। একইভাবে জার্মানির তৈরি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। নিলামে গাড়িটির দাম ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭১ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান বাজারে আড়াই লাখ কিংবা পাঁচ লাখ টাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও পাওয়া যায় না। সেখানে কোটি টাকা দামের গাড়ি এত কম টাকায় কিনতে চাওয়া অস্বাভাবিক। তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে কয়েকজন বিডার বলছেন, যেসব বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, সেগুলো পুরনো মডেলের। এখানে কোনো সিন্ডিকেট হচ্ছে না।
নিলামে গাড়ি সিন্ডিকেটের বিষয়ে নিলাম শাখার দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমদানিকারকের রিট মামলার কারণে গাড়ি খুব কমই নিলামে তোলা হয়। যেসব গাড়ি নিলামে তোলা হয়, সেগুলো ঘুরে ফিরে একই ব্যক্তিরা বিড করেন। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিলামের স্থায়ী আদেশ অনুসারে, ৬০ শতাংশ দর না পড়লে বিক্রয় অনুমোদন দেয়া হয় না। গত দুই নিলামে গাড়ির প্রাপ্ত দরের সাথে অবচয় মূল্য হিসাব করে দুই বারে ৩৭টি বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। বিক্রির অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিলাম কমিটি অনেক যাচাই বাছাই করে তারপর অনুমোদন দিয়ে থাকে।
নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, কার্নেট সুবিধার বিলাসবহুল গাড়িগুলো গত ২০১০-২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে। এ সব গাড়ি ইনভেন্ট্রি করে প্রথম দফায় ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, তৃতীয়বার ২০১৮ সালের মে মাসে ১১১টি গাড়ি এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো ২২টি গাড়ি তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই দামে অসামঞ্জস্য থাকায় গাড়ি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। পরে গত ২০২১ সালের ৩ ও ৪ নভেম্বর ই-অকশন ও ম্যানুয়াল নিলামে ১১২টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। সে সময় মাত্র ৩টি গাড়ি বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া গত ১২ ও ১৩ জুন অনলাইন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ১০৮টি গাড়ি নিলাম তোলা হয়। সেই নিলামে ৩৪টি গাড়ির বিক্রির অনুমোদন দেয় কাস্টমস। এরমধ্যে অধিকাংশই অনুমোদন হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুধুমাত্র গাড়ি নয়, কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হয় না। এটি এমন এক জায়গা যেখানে কে কে কত টাকা উল্লেখ করে দরপত্র জমা দিচ্ছেন, কেউ জানে না। নিলামে সিন্ডিকেটের কথা শুনে আসছি অনেক দিন ধরে। এটি পাবলিকের ভ্রান্ত ধারণা। এখন অনেক জায়গায় দরপত্রের বাক্স বসানো হয়। যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে দরপত্র ফেলছেন। এবার বিলাসবহুল গাড়ির নিলাম ম্যানুয়াল পদ্ধতি ছাড়া ই-অকশনেও (অনলাইন) হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার সন্তোষ সরেন বলেন, নিলাম কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে অনেক যাচাই বাছাই করে পণ্য অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছতার সাথে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭০ প্রার্থীর কারোরই ভোটাধিকার নেই
পরবর্তী নিবন্ধমূল ভবনের কাজ শেষ চলছে ফিনিশিং