রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে কোটাবিরোধী আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান কী হতে পারে, এ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন বেশ কয়েক জন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী। গতকাল সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনজন মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রী অংশ নেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এদিকে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এ সময় কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধা, আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন দেওয়া, শিক্ষকদের আন্দোলনও একই সময় এ বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। তবে বৈঠকের পর কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে কথা বলেননি। খবর বাংলানিউজের।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের কোটা আংশিক থাকতে পারে।
এদিকে বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার করার মতো বিষয় না এগুলো।
কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, আমরা এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করবো না। এটি আদালতের বিষয়। সরকার তো আপিল করেছে। সুতরাং অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, এটা রুটিন বৈঠক ছিল।
ধৈর্য ধরার আহ্বান অ্যাটর্নি জেনারেলের : অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। খবর বাংলানিউজের।
নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এমন পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী জানান, পুরো কোটা বাতিল না করে কেবল নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের কোটা বাতিল করেছিলেন। এটা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এখন থেকে এসব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তানদের নিয়োগে আর কোনো বাধা নেই। এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। হাইকোর্টের রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ‘নট টু ডে’ (আজ শুনানি নয়) আদেশ দেন। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা বিচারাধীন বিষয়। আমি সরকারের পক্ষ থেকে মামলাটা করেছি। এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। রায়টা (হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি) পেয়ে নেই। রায় পেলে দেখবো। এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখানে আদালত কতটুকু হস্তক্ষেপ করতে পারবেন সেটাই আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। রায় পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, (হাইকোর্ট) আদালত একটা আদেশে দিয়েছেন, সেই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহূর্তে আদালতের প্রতি ওনাদের (শিক্ষার্থীদের) যে আন্দোলনটা, এটা না করাই উচিত হবে। ওনাদেরকে আমি বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না এনে, আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে, হবে; সেই ক্ষেত্রে ওনাদের আমি একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। আমি জানি না আন্দোলনটা ওনারা কেন করছেন, তবে আন্দোলন না করলেই ভালো। তিনি আরও বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যায় তাহলেও সিপি (নিয়মিত আপিল) করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।