কেন্দ্রীয় নেতারা যা বললেন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ মে, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান গতকাল বুধবার নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, ত্রাণ সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত নন্দী রায়, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক বেগম ফরিদুন নাহার লায়লী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভায় মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আগামী ১ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। দলের যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। যোগ্য লোকদের মাঠ থেকে খুঁজে বের করতে হবে। আর যারা সারাদিন নেতাদের চারপাশে ঘুরঘুর করে এই তেলবাজদের দলে আসতে দেয়া যাবে না। তারা সুযোগ সন্ধানী। ওয়ার্ড ইউনিটে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বলছিলাম রাজনীতিতে যে শালীনতা আছে, শিষ্টাচার আছে আপনারা তা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনারা শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নামটাও আপনারা যেভাবে উচ্চারণ করছেন সেখানে শিষ্টাচার বা ভদ্রতার কোন নমুনা দেখিনি। আপনারা বলছেন টেনে হিচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাবেন। কোনো যৌক্তিকতা ছাড়াই বিএনপি আন্দোলন করছে।

হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল স্তরের কমিটিগুলো প্রতিনিধিত্বমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে হবে। সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো সংকীর্ণতার সুযোগ নেই। সংগঠনের দরজা সকল ভালো ও সৎ মানুষের জন্য খোলা। অতীতের ভূল শুধরে ও পরিশুদ্ধ হয়ে কেউ যদি দলে আসতে চায় তাকেও বরণ করে নেওয়া হবে। তবে যারা নতুন সদস্য হবেন এক বছরের আগে তারা কোনো পদ পদবি পাবেন না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষয়িষ্ণু কনভেনশন মুসলিম লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি হবে না।

তিনি বলেন, ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ এটা ব্যক্তি পর্যায়ে চলে, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ সংগঠনে এটা চলতে পারে না। আগতদের যারা কাউয়া-হাইব্রিড বলে বিতাড়িত করতে চায়, তারা দলকে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে নিতে চায়। কেন শুধু নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারাজীবন দল চালিয়ে আওয়ামী লীগকে মুসলিম লীগে পরিণত করব? আওয়ামী লীগে নতুন যোগ দেওয়া কাউকে ‘হাইব্রিড’ বলে অপমান করার অধিকার কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি

হুইপ স্বপন বলেন, খন্দকার মোশতাক কোন দল করতো? তাহের উদ্দিন ঠাকুর কোন দল করতো? শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কোন দল করতো? এরা কোন দল থেকে আওয়ামী লীগে এসে অনুপ্রবেশ করেছে? এরা কেউ অনুপ্রবেশকারী নয়। সবাই আওয়ামী লীগের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেউ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী পরিষদের কেবিনেটে ছিলেন। এরাই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। কাজেই জন্মলগ্ন থেকে আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার পিতা আওয়ামী লীগ করতেন। আমার দাদা আওয়ামী লীগ করতেন। এই জন্য আমি পরিশুদ্ধ, আর কেউ পরিশুদ্ধ নয়। এই যে মানসিকতা তা পরিহার করতে হবে। এ মানসিকতা আওয়ামী লীগকে মুসলিম লীগে রূপান্তর করবে। ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকে যারা ভুল বুঝতে পেরেছে তারা কি আওয়ামী লীগ করতে পারবে না? সবাইকে কেন তাড়িয়ে দিব? শুধু আমার মামাতো ভাই, চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, ভগ্নিপতি, শ্যালক-সম্বন্ধী আমার বংশের কতিপয় লোক, তারা আওয়ামী লীগ করবে, বাকি কেউ আওয়ামী লীগ করতে পারবে না। আবার আমার বংশের সব লোক না, আমার বাড়ির পাশের চাচা যার সাথে জমির সমস্যা আছে, আমার মায়ের সঙ্গে চাচির বাসনপত্রে গন্ডগোল আছে সে সহিহ রক্ত না। শুধু আমাকে যারা পছন্দ করে, যারা শুধুমাত্র আমাকে সাপোর্ট করে তারাই সহিহ রক্ত। তারাই আওয়ামী লীগ।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কিভাবে দলকে সুসংগঠিত করা যায় সেই লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের দলের পরিধি বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, বর্তমানে দেশে বিএনপি-জামাত মানুষের মাঝে একটি ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেটি হলো- বাংলাদেশ শ্রীলংকা হতে যাচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না যে, বাংলাদেশ আর শ্রীলংকা এক নয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের ত্রাণ সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত নন্দী রায়, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক বেগম ফরিদুন নাহার লায়লী, অর্থ পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।

সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আসন্ন সম্মেলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর ১৫ থানার জন্য গঠিত ১৫ সমন্বয় কমিটিকে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। এই সভায় সংসদ সদস্য এম এ লতিফের সাথে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের বাকবিতণ্ডা হয়। সভায় এম এ লতিফ এমপি সভাপতির অনুমতি না নিয়ে কথা বলতে উঠলে হু্‌ইপ স্বপন তাকে সভাপতির অনুমতি নিয়ে কথা বলতে বলেন। এসময় এম এ লতিফ এমপি আবারো কথা বলতে উঠলে এক পর্যায়ে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এসময় তিনি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে সভা থেকে চলে যেতে চান। এসময় মহানগর আওয়ামী লীগসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে শান্ত করে সভা চালিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। এসময় আরো অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও সাংসদ এম এ লতিফের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন বলে জানান সভায় উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের এক সহ সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনের কাজ শুরু হবে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধচলন্ত বাসে সেই পোশাক কর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল