কেএমসি সেবায় নার্সদের প্রশিক্ষণ এখন চমেক হাসপাতালেই

নবজাতক ওয়ার্ডে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু আজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ মে, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে (স্ক্যানু) ৩০ শয্যার ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত ১৭ মার্চ। বিশেষ এই ইউনিটে মায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে অসুস্থ শিশুদের। এতদিন মায়ের কাছ থেকে আলাদা রেখে স্ক্যানুর ভেতরে নবজাতককে চিকিৎসা দেয়া হতো। আর মায়েদের অপেক্ষায় থাকতে হতো বাইরে। নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাক এলে ভেতরে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগটুকু পেতেন মায়েরা। তবে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) ইউনিট চালুর ফলে মায়েরা সন্তানদের বুকে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।

কেএমসি ইউনিট উদ্বোধনের পর এবার কেএমসি সেবায় নার্সদের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু হচ্ছে এ বিভাগে। যা ঢাকার বাইরে প্রথম বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ। তিনি বলেন, এতদিন কেবল ঢাকায় এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ ছিল নার্সদের। তবে এখন থেকে নার্সরা আমাদের (চমেক হাসপাতালের) এই নবজাতক ওয়ার্ডেই এ প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। কেএমসি ট্রেনিংয়ের জন্য নার্সদের আর ঢাকায় যেতে হবে না। নবজাতক ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রথমবার তিন দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আজ (১০ মে) থেকে শুরু হচ্ছে এই ওয়ার্ডে। ‘ট্রেনিং অন ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার ফর নার্স’ শীর্ষক এ প্রশিক্ষণে জেলার সবকয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালের মোট ২০ জন নার্স অংশ নিচ্ছেন। নবজাতক বিভাগের চিকিৎসকরাই নার্সদের এ প্রশিক্ষণ দেবেন।

এদিকে, কেএমসি সেবায় নার্সদের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা উপলক্ষে আজ অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে নবজাতক ওয়ার্ডে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের সভাপতিত্বে চমেক অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বলে জানিয়েছেন নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।

চিকিৎসকরা জানান, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে ২৫টি শয্যা ও ৫টি চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে অনেকটা ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে থাকতে পারবেন মায়েরা। ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে রাখা যায় বলেই এটিকে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) বলা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন নবজাতক ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে ৫ থেকে ১০টি শয্যা ও চেয়ারে কেএমসি সেবা চালু থাকলেও ৩০ শয্যার আলাদা কেএমসি ইউনিট কোথাও নেই। সে হিসেবে চমেক হাসপাতালের ৩০ শয্যার এই ইউনিটই দেশের প্রথম আলাদা কেএমসি ইউনিট বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।

প্রসঙ্গত, জন্মের পরপর বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় যেন ভরসার অপর নাম চমেক হাসপাতালের এ নবজাতক ওয়ার্ড। যদিও এটি স্ক্যানু (স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট) হিসেবেই পরিচিত। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর নবজাতকের চিকিৎসায় এটিই একমাত্র ভরসাস্থল। যার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতককে নিয়ে এখানে ছুটে আসেন মা-বাবারা। এক দিনের বয়স থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুদের বিশেষ এ ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয় জানিয়ে নবজাতক ওয়ার্ডের (৩২নং) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহীন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সৈয়দা হুমায়দা হাসান বলেন, বিশেষ করে জন্মের পরপর শ্বাস নিতে না পারা বা কান্না না করা, জীবানুর সংক্রমণ (ইনফেকশন) এবং অপরিণত ও স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা নবজাতকদের এ ইউনিটে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী বছর এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা সব বিষয়ে
পরবর্তী নিবন্ধএক এজেন্সি থেকে অন্য এজেন্সিতে হজযাত্রী স্থানান্তরের সুযোগ