কৃষিতে বিপ্লব, পর্যটনে আকর্ষণীয়

চাম্বি খাল রাবার ড্যাম

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে চাম্বি খালের রাবার ড্যাম একদিকে যেমন কৃষি বিপ্লবে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে অন্যদিকে ড্যাম ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও। ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামের জয়নগরে চাম্বি খালে বাঁধ দিয়ে এই রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন চুনতি ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চুনতি চাম্বি খালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ ও রাবার ড্যামকে ঘিরে একটি পর্যটন এলাকা সৃষ্টির উদ্যোগ নেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের প্রচেষ্টায় এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে উত্তর-দক্ষিণে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যামের বাঁধ দিয়ে শুরু হয় এর নির্মাণ কাজ। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া ড্যামটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি। উদ্বোধনের পর ড্যামের জমানো পানি দিয়ে পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চা এলাকার বহু জমিতে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মূলত এটি একটি সেচ প্রকল্প। এলজিইডির ওই প্রকল্পের নির্দেশনা মোতাবেক চাম্বি খাল ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি রাবার ড্যামের কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন কেন্দ্র দেখাশোনা করে। মনিটরিং করে এলজিইডি। এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের পর্যটন কেন্দ্র দেখভাল করার জন্য রয়েছে ৯ জন কর্মচারী। রাবার ড্যামের জমানো পানি দিয়ে প্রতিবছর পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চা এলাকার প্রায় ৫০০ একর জমি চাষাবাদ হয়। আর খালের উজানে ৫ শতাধিক একর জায়গার জমানো পানিতে মৎস্য চাষ করা হয়। একদিকে রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করে আকর্ষণীয় লেক। রাবার ড্যাম সংলগ্ন স্থলভাগে গড়ে উঠেছে পর্যটন এলাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বিদেশি পর্যটকসহ বহু দর্শনার্থী ভ্রমণ করেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, রাবার ড্যামের বাঁধের ওপর মনোরম একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা রয়েছে। রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করেছে আকর্ষণীয় লেক। লেকের জমানো পানি উজানে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। লেককে আনা হয়েছে মৎস্য প্রকল্পের আওতায়। পূর্বপাশে সমতল, বাকি তিন পাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ পানির চাম্বি লেক। চাম্বি লেক থেকে একটু দূরে রয়েছে হাতির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ৩টি কৃত্রিম পানির ফোয়ারা, ৫টি বিভিন্ন পাখির ভাস্কর্য, ৫টি প্রাণির ভাস্কর্য, ১টি জীবন্ত লজ্জাবতী বানর, খাঁচায় বন্দি আছে সাধারণ ৩টি বানর, একটি স্পিডবোট, প্যাডেল বোট ২টি, লাইফ বোট ১টি ও নৌকা ৩টি। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সম্প্রতি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে ফ্যামিলি ট্রেন, পর্যটকদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘শুধু আমরাই’ রেস্টুরেন্ট। লেকের মাঝখানে আছে মায়া দ্বীপ। যেখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে ড্রামভেলা। পাহাড়ের টিলায় তিনটি গোলঘর। যেখান থেকে পুরো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়াও পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে রিসোর্ট। লেকে রয়েছে মনোরম পিকনিক স্পট। এই শীতে চাম্বি লেক যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
চাম্বি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মাহাবুবর রহমান চৌধুরী জানান, চাম্বি খালে রাবার ড্যাম স্থাপনের কারণে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাবার ড্যামে জমানো পানি দিয়ে প্রতি বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব। এতে উপকৃত হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান হাবিব জিতু জানান, চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা এলাকায় চাম্বি রাবার ড্যাম প্রকল্প একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়া এটি কৃষি ও মৎস্য খাতে অবদান রাখছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুন করে তাবলিগে আত্মগোপন, র‌্যাবের হাতে ধরা
পরবর্তী নিবন্ধএকটি স্কুল মাঠ ও দুই তরুণের উদ্যোগ