প্রতি বছর বসন্ত উৎসব আসে। আসে ভালোবাসা দিবসও। ভালোবাসার সুন্দরতম নির্দশন হিসেবে প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়ার রীতি চিরন্তন। ফুল শুভ, সুন্দর আর ভালোবাসার প্রতীক। যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়। ফুলের ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন চট্টগ্রামের কয়েকশ ব্যবসায়ী। বিশেষ করে চেরাগী পাহাড়কেন্দ্রিক এই ব্যবসা বেশ জমজমাট। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে চেরাগী পাহাড়ের ফুল ব্যবসায়ীরা কী ভাবছেন? তুলে ধরা হলো তাদের ভাবনা।
মো. মোজাম্মেল হক মিটু
ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা মার্কেট চাই
ফুল ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল হক মিটু বলেন, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার চেরাগী পাহাড়সহ ডিসি হিলের আশেপাশের এলাকা। প্রতি বছর বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ভোর রাত থেকে জমে ওঠে ফুলের বেচাকেনা। এখানে পাইকারি-খুচরা দুটোই বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, চেরাগী পাহাড়ের ফুলের বাজারের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এখানে দেশি ফুলের পাশাপাশি বিদেশি ফুলও পাওয়া যায়। যারা বিয়ে বা বিভিন্ন উৎসবের জন্য আলাদা করে ফুল কিনতে চান, তারা পাইকারি দরেও ফুল কিনতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা কোনো মার্কেট নেই। ফুল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং চট্টগ্রামের মেয়রের কাছে আমাদের আবেদন, ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য যেন আলাদা মার্কেট করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে উঠতি ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা বাড়তি আনন্দ বিরাজ করে। তারা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়। আমরা দিন-রাত ফুল বিক্রি করি। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ এই দিনে প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিতে আমাদের কাছে আসেন।
তিনি আরো বলেন, তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ফুল বিক্রি একটু কম। প্রতি বছর এই দুটি উৎসব ঘিরে ২/৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এই বছরও প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো ফুলের ব্যবসা হবে বলে আশা করছি। দেশের পাশাপাশি চীন ও ভারত থেকে ফুল আসছে বলে জানান তিনি।
সরোজ ভট্টাচার্য্য
এই ব্যবসার প্রতি মায়া জন্মে গেছে
ব্যবসায়ী সরোজ ভট্টাচার্য্য বলেন, শুধু দেশে নয়, পৃথিবীর সমস্ত শুভ আর সুন্দর কাজে সবার আগে ফুলের দরকার হয়। অথচ এই ফুল যারা উৎপাদন করেন, এ ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের কোনো সম্মান নেই।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। এবারের বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে আমরা যে পরিমাণ ফুল বিক্রির টার্গেট করেছিলাম, তার তুলনায় একটু কম হলেও বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, আমি ২০০১ সাল থেকে চেরাগী পাহাড় এলাকায় ফুলের ব্যবসার সাথে জড়িত। এই ব্যবসার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। লাভ-লোকসানে আছি। তারপরও এই ব্যবসা ছাড়তে পারি না।
সরোজ জানান, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রচুর ফুল এসেছে। যে পরিমাণ ফুলের দরকার তার ২০ ভাগ আসে চকরিয়া এবং সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে। বাকি ৮০ ভাগ আসে যশোর থেকে। বছরের অন্য দিনগুলোর তুলনায় এই দুটি দিনের দিকে তারা তাকিয়ে থাকেন। বিক্রি ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বাদশা মিয়া
বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে ভালো ব্যবসা হয়
ফুল ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া আজাদীকে বললেন, সারা বছরের তুলনায় বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে ফুলের ভালো ব্যবসা হয়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রস্তুতিরও কমতি নেই। চেরাগী পাহাড়সহ ডিসি হিলের আশেপাশে ৬০টির মতো ফুলের দোকান রয়েছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রামে ৩শ ফুলের দোকান রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয় চেরাগী পাহাড় এলাকায়। শনিবার একদিনে আমি ১০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। অন্য দোকানগুলোতে ২-৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে চেরাগী পাহাড় এলাকার ব্যবসায়ীদের ২-৩ কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মনের আনন্দে এই ব্যবসায় জড়িত জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া বলেন, আমাদের একেকটি ফুলের দোকান যেন দোকান নয়, ফুলের বাগান। তবে এই ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ব্যবসা আরো সমৃদ্ধ হবে।
মো. জানে আলম
চীনের প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধ করা উচিত
ব্যবসায়ী মো. জানে আলম বলেন, ফুল ব্যবসায়ীদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। এর প্রধান কারণ হলো, চীনের প্লাস্টিক ফুল আমদানি। হুবহু তাজা ফুলের আদলে চীন থেকে প্লাস্টিকের ফুল আসায় দেশীয় ফুল চাষি এবং ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সারা দেশের হাজার হাজার ফুল চাষি আজ ধ্বংসের মুখে। দেশীয় ফুল চাষ উদ্বুদ্ধ করতে এখনই সরকারের উচিত চীনের প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধ করা। দেশের গুটিকয়েক মুনাফাভোগী এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তারপরও ফুলের প্রতি ভালোবাসা এবং আবেগের কারণে অন্য পেশায় যেতে পারছি না।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ফুল ব্যবসায়ীরা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস, পহেলা বৈশাখ, ঈদের আগের দিনের মতো বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এবারও চকরিয়াসহ সারা দেশ থেকে প্রচুর ফুল এসেছে। অন্যান্যবারের মতো না হলেও একেবারে কম হবে না। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। আজ রোববার ভোর থেকে বিক্রির ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।