নির্বাচনী সহিংসতা ও নাশকতার ‘পরিকল্পনা’য় প্রায় প্রতিদিন মামলা হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। মামলায় আনীত অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, ‘সাজানো’ মামলায় আসামি করে প্রতিদিন ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। গত দুইদিনে অন্তত এজেন্টসহ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করারও দাবি করেছে তারা। নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে একাধিকবার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগও দিয়েছে বিএনপি। অবশ্য পুলিশের দাবি, ‘নির্বাচনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’
সিএমপি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী সহিংসতাকে ঘিরে গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত নগরের ১০ টি থানায় মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বন্দর, সদরঘাট ও পতেঙ্গা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়। মামলাগুলোতে আওয়ামী সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর নিবাচর্নী কার্যালয় ভাঙচুর, নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। এরমধ্যে গতকাল জনৈক আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মমালা করেন। মামলায় ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ করা হয়। মামলায় ১৪ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতানামা ৩০/৪০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া সদরঘাট থানায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করে। এতে ২০ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ করা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। এছাড়া পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপি’র ১৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এরআগে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পাহাড়তলী থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা, পাঁচলাইশ থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ১৮/২০জনকে অজ্ঞাতনামা, কোতোয়ালী থানায় স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খানসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫/২০জনকে অজ্ঞাতানামা, বাকলিয়া থানায় দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াছিন চৌধুরী আছুর ছেলে সানাউল্লাহ সানিসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন এবং আকবর শাহ থানায় ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। এছাড়া চান্দগাঁও ও হালিশহর থানায়ও দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
পুলিশের বক্তব্য :
সিএমপি’র গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত কয়েকদিনে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। মামলাগুলোর তদন্তাধীন অবস্থায় এজহারনামীয় যেসব আসামী আছে বা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করছি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত, বিদ্রোহী বা বিএনপি’র যারাই জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করছি। কাউকে উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যেমন- লালখান বাজারের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেখানে অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী কিন্তু অ্যারেস্ট হয়েছে। অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধে যারাই জড়িত তাদেরকেই গ্রেপ্তারে বা আইন প্রয়োগের ব্যাপারে শতভাগ নিরপেক্ষ আছি। এখানে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করছে না বা অন্য কোন উদ্দেশ্যও নেই। যদি থাকতো তাহলে ডা. শাহাদাতের প্রচারণায় আমরা পুলিশি নিরাপত্তা দিতাম না। তিনি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে চারজন সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছি।
বিএনপির বক্তব্য :
গতকাল বন্দর, সদরঘাট ও পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলাকে সাজানো দাবি করে নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান এক বিবৃতি এ নিন্দা জানান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতাদের বাসায় বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে, হয়রানি করছে। গ্রেপ্তার করছে। প্রায় প্রত্যেকটা কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়ি গিয়ে ধমক দিচ্ছে। প্রার্থীকে বলছে, এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। যেখানে নেতাকর্মীরা অনুপস্থিত সেখানে তাদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের হেনস্থা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০টি থানায় সাজানো মামলা হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় ২০/২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পতেঙ্গায় প্রচারণা শুরুর পূর্বে দুইজনকে এবং বকসিরহাটে গণসংযোগ শেষ করা মাত্র চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে কোন সুফল পাচ্ছি না।
ইসিতে অভিযোগ :
ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে গতকাল রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের নিকট দুটি অভিযোগ দিয়েছে নাগরিক ঐক্য পরিষদ। এতে বলা হয়, ‘রাতের আঁধারে বিএনপির নেতাকর্মী ও এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে ঘরে থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ । অথচ ওরা কেউ এজাহারভুক্ত বা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নয়।’
৪৮ জনকে গ্রেপ্তারের দাবি :
মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ইদ্রিস আলী বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার দিনব্যাপি অভিযান চালিয়ে আমাদের ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- বঙিরহাট ওয়ার্ডের ধানের শীষের এজেন্ট রফিকুল আলম, নুরুল আলম মজনু, আইয়ুব আলী, মোজাম্মেল হক মিন্টু, মহিউদ্দীন খান রাজিব, মো: মামুন, আনোয়ার হোসেন, মো: আলী, নূর হোসেন, আশরাফ খান ও দিদারুল আলম, মো: সাইফুল, মাহাবুব আলম, আব্দুস সোবহান, রাসেল করিম, এনায়েত বাজার যুবদল নেতা মো: নওশাদ, নূর হোসেন, মহিউদ্দীন চৌধুরী জসু, মো: লোকমান, দিদারুল আলম, মো: হাসান, মো: মামুন, মোহরা ওয়ার্ডের মো: গোলাপ, মো: হারুন, মো: সোহাগ মো: ইউনুছ আব্দুল করিম।