কিছু বড় দেশ বাংলাদেশে তাঁবেদার সরকার চায় : প্রধানমন্ত্রী

জিয়া হাজার হাজার খুন-গুম করেছিলেন

| বৃহস্পতিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

জিয়াউর রহমান তার ‘পাপের কারণে’ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে যেটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সমাধি হিসেবে পরিচিত, সেখানে তার মরদেহ নেই। ‘ধূর্ত’ এরশাদ লোক দেখাতে একটি বাক্স এনে সেখানে সমাহিত করেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে বুধবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক আলোচনায় তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে।’ খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারসদস্যদের হত্যা করে। বিমান বাহিনীর শত শত অফিসারদের হত্যা করেছে। হত্যা করে লাশ কারো কাছে দেয়নি, গুম করে ফেলেছিল জিয়াউর রহমান। এখনো তাদের পরিবার তার লাশ খুঁজে ফেরে কোথায় তাদের কবর।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যেভাবে জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে সেও কিন্তু খুন হয়। জিয়াকে হত্যার পর তার মরদেহ চট্টগ্রামের পাহাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তুলে এনে জাতীয় সংসদভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয় সে সময়ের সরকারের পক্ষ থেকে। তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যিনি পরে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে ক্ষমতা দখল করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তার (জিয়া) লাশের কিন্তু কোনো খবর নাই। সংসদ ভবনে যে কবর দেওয়া হয়েছে, সেখানে জিয়ার কোনো লাশ নেই। জেনারেল এরশাদ সেই কথা কিন্তু বলে গেছে। সে বলেছে, জিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি। জিয়ার লাশ খালেদা বা তারেক বা কোকো বা পরিবার পরিজন কেউ দেখে নাই। তাহলে লাশ গেল কোথায়?

পরে তিনি বলেন, এরশাদ ধূর্ত লোক ছিল বলে একটি বাঙ এনে লোক দেখানোর জন্য সংসদ ভবনে একটি অবৈধ স্থাপনায় কবর দিছে। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মী ফুল দেয়। কিন্তু কাকে ফুল দিচ্ছে সেটা কি তারা জানে? জানে না। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়ে তার কন্যা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। জাতির পিতা নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন এ দেশের মানুষের জন্য। সেই ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদ দিয়ে শুরু, এরপর ধাপে ধাপে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বিশ্বে যে সম্মান হয়েছিল, ১৫ আগস্টের মাধ্যমে তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

জিয়া জড়িত না থাকলে খোন্দকার মোশতাক কখনো এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারতেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘জিয়া যে জড়িত, তা প্রমাণিত সত্য। সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে একাধারে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। আর ‘হ্যাঁনা’ ভোট অর্থাৎ ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিবিনি খেলা জিয়াই শুরু করেছিল। অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেটির বৈধতা দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান ভোট কারচুপির মাধ্যমেক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোক এনে এবং চাপ সৃষ্টি করে কিছু লোক এনে অবৈধভাবে দল গঠন করে। বিএনপি একটি অবৈধ দল।’

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জিয়ার হাতে আমাদের শত শত নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে। অনেককে হত্যা করেছে, অনেককে গুম করেছে। ঠিক খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে একই ঘটনা। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছিল, তা ভাবলে এখনও শিহরিত হতে হয়। কত নেতাকর্মীকে দিনের পর দিন কারাবরণ করতে হয়েছে। অনেককে ধরে নিয়ে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ বলতে পারে না। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে এদেশে হত্যাখুনগুম এটাই জনগণের ভাগ্যে ঘটেছে। জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি, বলেন সরকারপ্রধান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবেদন সংশোধনের সুযোগ আজ, করা যাবে নতুন আবেদনও
পরবর্তী নিবন্ধকাউন্সিলর জসিমসহ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ