কিছু দিনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা শুনবেন : আইন উপদেষ্টা

| শুক্রবার , ১ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

কিছু দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও সমসাময়িক কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচনের তারিখ কবে ঘোষণা করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, অপেক্ষা করেন, কিছু দিনের মধ্যে ঘোষণা শুনবেন। নির্বাচনি কার্যক্রম তো নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমি শুধু আমাদের সরকারের নিয়তের কথা আপনাদের বলতে পারি। আমাদের নিয়ত আছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন দেওয়ার, এটা স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের সব সময় বলেন। ভোট করা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের হেন উদ্যোগ নেই, যা নেওয়া হচ্ছে না। খবর বিডিনিউজের।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার তৃতীয় দিন ২৬ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে চারপাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করার বার্তা দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নেতাদের।

ওই বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফরের) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছিলেন, আগামী চারপাঁচ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সময়ের মধ্যে তাদের আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করার কথা বলেন। এরপর চার দিন পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে আর কিছু বলা হয়নি। তবে বিএনপির নেতারা প্রতিদিনই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। আর জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার ও বিচার কাজ শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা নিয়ে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক আইন উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ২০০৮ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে নির্বাচন হয়েছিল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন নেই। এরপরের নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনারা এবার কী করবেন যে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, এর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, কাজ করেন, অনেক ভয়াবহ তথ্য পাবেন ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে। তবে কী সেই ভয়াবহ তথ্য তা নিয়ে আর কিছু বলেননি উপদেষ্টা।

দায়িত্বে আসার প্রথম বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন তার মন্ত্রণালয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। স্বাভাবিক যে কাজ থাকে তারচেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি কাজ করেছি।

সংবাদ সম্মেলন নিজের কাজের হিসাব তুলে ধরার সময় উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, কী ভাই! আমরা একটু কাজ করেছি, মনে হচ্ছে? উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক বলে ওঠেন, হ্যাঁ, সার। আপনি অনেক কাজ করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকালে আইন মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে লক্ষণীয় গতিশীলতা বেড়েছে দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, গত এক বছরে মন্ত্রী পর্যায়ে নথি নিষ্পত্তি হয়েছে ১২৮৩টি। আগের সরকারের একই সময়ে ৮৩৪টি নথি নিষ্পত্তি হয়েছিল। তার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরের ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত দিয়েছে, যা আগের সরকারের আমলে ছিল ১৮০টি। এসময়ে সনদ, এফিডেভিট, দলিলসহ ৩৬ ধরনের মোট এক লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪টি ডকুমেন্ট সত্যায়ন হয়েছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ বলে তিনি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগ করা সব আইন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ার কারণে গত একবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করতে হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন অ্যাটর্নিকে নিয়োগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমের তথ্য দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে এজাহার, অভিযোগপত্রসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সুচারুভাবে সব ভুক্তভোগীকে এ সুযোগ দেওয়ার কাজ চলমান রাখতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত
পরবর্তী নিবন্ধ১ আগস্ট : রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, ৬ সমন্বয়কের মুক্তি