কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই

আজাদী অনলাইন | রবিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

কিংবদন্তি গীতিকার, কাহিনিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা গেছেন। (ইন্না…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা ও গীতিকারের ভাগ্নে শাহরিয়ার নাজিম জয়।

শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, ‘‘মামা গত দু’দিন ধরে শারীরিকভাবে খানিক অসুস্থ ছিলেন। তবে সেটি উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলো না। বার্ধক্যজনিত কিছু ছোট জটিলতা। আজ সকালে আল্ট্রাসাউন্ড করার কথা ছিল খালি পেটে। সাড়ে ছয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যান। সেখানেই মাথাঘুরে পড়ে যান এবং জ্ঞ‍ান হারান। ছেলে উপল আনোয়ার দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন জ্ঞান ফেরাতে। কিন্তু পারলেন না।’’

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের একমাত্র ছেলে উপল আনোয়ার সকাল ৯টা নাগাদ জানান, ‘‘হাসপাতাল থেকে গোসল করিয়ে কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বারিধারার বাসায়। এরপর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানাজা ও দাফনের বিষয়ে।’’

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৬৪ সাল থেকে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তার রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। তার গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ, অনুভূতির কথা।

১৯৬২-৬৩ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় গাজী মাজহারুল আনোয়ার লিখেছিলেন প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। গানটির সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে পেশাদার গীতিকার হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি।

১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তার অবদান ছড়িয়ে আছে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অঙ্গনে।

সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘দেশ চিত্রকথা’’ থেকে ‘শাস্তি’’, ‘স্বাধীন’’, ‘শর্ত’’, ‘সমর’’, ‘শ্রদ্ধা’’, ‘ক্ষুধা’’, ‘‘স্নেহ’’, ‘‘তপস্যা’’, ‘‘উল্কা’’, ‘‘আম্মা’’, ‘‘পরাধীন’’, ‘‘আর্তনাদ’’, ‘‘পাষাণের প্রেম’’, ‘‘এই যে দুনিয়া’’- নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।

বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গানের রচয়িতা গুণী এই গীতিকবি। গানগুলো হচ্ছে- ‘‘জয় বাংলা বাংলার জয়’’, ‘‘একতারা তুই দেশের কথা বল’’ ও ‘‘একবার যেতে দে না’’।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকার হিসেবে ৫ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তার ঝুলিতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাইওয়ানের কাছে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র
পরবর্তী নিবন্ধটি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন মুশফিক