একজন রাসায়নিক পরীক্ষক এবং সহকারী দিয়েই গত কয়েক বছর ধরে চলছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) কাজ। এরমধ্যে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষককে বেনাপোল কাস্টমসে বদলি করে দেয়া হয়। ফলে পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্ব পড়ে ল্যাবের একমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষক আবদুল হান্নানের ওপর। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পারিবারিক কারণে দুই দফা ছুটিতে থাকায় সম্প্রতি থমকে যায় পণ্যের নমুনা পরীক্ষা। নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকার কারণে বন্দর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে পারছে না আমদানিকারকরা। বন্দর থেকে ক্ষেত্র বিশেষে পণ্য খালাসে রাসায়নিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে, ফলমূল ফরমালিন পরীক্ষা ছাড়া খালাস করা যায় না। পরীক্ষা বন্ধ থাকার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে শত শত কন্টেনার আটকে আছে। এতে আমদানিকারকদের পোর্ট ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
রাসায়নিক ল্যাবের কর্মকর্তারা জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহে ল্যাবের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক মনোয়ারা শিরিনকে বদিল করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে মাত্র একজন পরীক্ষক দিয়েই ল্যাবের পরীক্ষা নিরীক্ষা সামলাতে হচ্ছে। সম্প্রতি ল্যাবের পরীক্ষক আবদুল হান্নান পারিবারিক কারণে চারদিন ছুটিতে থাকায় পণ্যের নমুনা জমে গেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক নমুনা আসে। এই বিশাল পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক নমুনার পরীক্ষা আবার দ্রুত করে দিতে হয়। বর্তমানে যে অবস্থা এতে অন্তত ১০ জন রাসায়নিক পরীক্ষক দরকার।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কে শোনে, কার কথা। এখন দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। পর্যাপ্ত রাসায়নিক পরীক্ষকের অভাবে যে পরীক্ষা একদিনে শেষ হওয়াা কথা সেটি শেষ হতে তিন চারদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য খালাস। একইসাথে ব্যবসায়ীদের পোর্ট ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছুটিতে থাকায় প্রায় ১১ দিনের মতো ল্যাবের একমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষক কাজ করতে পারেন নি। ওনার বিকল্প না থাকায় ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জট লেগে গেছে। এতে আমদানি পণ্য খালাস প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, রাসায়নিক পরীক্ষক দুইদিনের ছুটিতে ছিলেন। বর্তমানে ল্যাবের রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ স্বাভাবিক আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য জনবল না বাড়ানো পর্যন্ত কাস্টমস ল্যাবে আমদানিকৃত ফলের ফরমালিন পরীক্ষা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের শেষদিকে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লিখেছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার। সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘বেনাপোল, সোনা মসজিদ, ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে আসা ফলের ক্ষেত্রে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা বিদেশি ফলের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, অধিকাংশ ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। আবার ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করতে গেলে অন্য নমুনার পরীক্ষায় প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে জনবল সংকটের কারণে সঠিক সময়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় না, এতে পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। এছাড়া ল্যাবে আসা বিভিন্ন নমুনার বিপরীতে গড়ে ৩০ শতাংশ পণ্য মিথ্যা ঘোষণা শনাক্ত হয়। রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপিত হলে আরও অধিক সংখ্যক নমুনা এই কাস্টমসের ল্যাবে করা সম্ভব হবে। ফলে আরো বেশি মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।’