চট্টগ্রাম কাস্টমসে সিএন্ডএফ লাইসেন্স স্থগিতের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় কর্মবিরতি। পরবর্তীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ায় বিকেল পৌনে ৫ টায় প্রায় ৮ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঘুষ, দুর্নীতিসহ স্পীড মানির নামে আদায়কৃত সকল প্রকার অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে, স্থগিত মেসার্স প্রাইম ক্লিয়ারিং হাউসের লাইসেন্স স্থগিতাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। লাইসেন্সিং বিধিমালার বিধি-১৭(২) এ বর্ণিত মূল বা রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত হলে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস সরকার পারমিট বাতিল বা স্থগিত মর্মে গণ্য হবে’- এ আইনসহ ফেডারেশন অব কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের দাবি অনুযায়ী আইনসমূহ বাতিল করতে হবে। দেশের সকল কাস্টম হাউস/শুল্ক স্টেশনে অভিন্ন শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারকপূর্বক শুল্কায়নে ইতিপূর্বে বারবার গৃহিত সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারকদের অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টম হাউস চট্টগ্রামে সাথে আলোচনার ভিত্তিতে গৃহিত সকল সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল পর্যায়ের শুল্ক কর্মকর্তাগণ কর্তৃক শুল্ক আইন, বৈধ এসআরও সমূহ আলোচনার মাধ্যমে গৃহিত ইতিবাচক সিদ্ধান্তগুলো অমান্য করার প্রবণতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, চীন থেকে আমদানি করা কাটার মেশিন শুল্কায়নে সেকশন-৮(বি) এর রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনের সাথে গত বুধবার দুপুরে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান প্রাইম ক্লিয়ারিং হাউসের মালিক রফিুকল আলমের তর্কাতর্কি হয়। পরবর্তীতে নিজাম উদ্দিন কাস্টম কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, রফিকুল আলমকে অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় তাকে মারার জন্য উদ্যেত হন। অভিযোগ আমলে নিয়ে কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ রফিকুল আলমের সিএন্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করে। এই ঘটনার জেরে ফুঁসে উঠে সিএন্ডএফ এজেন্টরা।
এ বিষয়ে প্রাইম ক্লিয়ারিং হাউসের স্বত্বাধিকারী রফিকুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি বাজেট মতে, আমি কার্টার মেশিনের শুল্কায়নে এসআরও সুবিধা পাই। আগে পণ্যটির শুল্ক ছিল ২৬ শতাংশ, নতুন এসআরও মতে সেটি হলো-১১ শতাংশ। আমার কর্মচারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে নতুন এসআরও বিষয়টি বুঝালেও ওনি বুঝতে চাচ্ছেন না। এক পর্যায়ে আমি কাস্টমস হাউসে এসে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি। ওনি ওই সময় বলেন, ১১ শতাংশতে শুল্কায়ন হবে, তবে তাকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে। আমি বললাম, ১১ শতাংশতে আমার শুল্ক আসে ৩০ হাজার টাকা। ২৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করলেও তো এতো টাকা লাগবে না। এসব বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হলে ওনি কাস্টমসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বানোয়াট অভিযোগ করেন। পরে জানতে পারলাম কাস্টমস আমার লাইসেন্স স্থগিত করেছে।
এ বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, অনৈতিক সুবিধা না দেয়ার প্রেক্ষিতে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রাইম ক্লিয়ারিং হাউসের মালিক। তাই আমি নিয়ম মতে, আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ করি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, অনৈতিকভাবে একজন সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করার প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি। আমরা বিভিন্ন সময় ঘুষ দুর্নীতিসহ অনেক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হয়রানির সম্মুখিন হচ্ছি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমস কর্র্তারা ঠুনকো অভিযোগে আমাদের লাইসেন্স স্থগিত করে দিচ্ছে। লাইসেন্স স্থগিত করার প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি। পরে কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলে আমরা কাজে ফিরে যাই।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (লাইসেন্স শাখ) সুলতান মাহমুদ বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তার খারাপ ব্যবহারের অভিযোগে একজন সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষে বিকেলে সমাধান হয়ে গেছে।