একুশে থেকে একাত্তর এবং ধর্মান্ধদের হুক্কাহুয়া
১. একুশে টিভির পদযাত্রা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার টিভি জার্নালিজমের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। শুধু টিভি জার্নালিজমই নয় টেলিভিশন বলতে আমরা যা বুঝি সে বোঝার জগতে একটি বিপ্লব। গতানুগতিকার বাইরে আধুনিক, উদার, মুক্ত, অসামপ্রদায়িক টিভি চ্যানেল হিসেবে একুশে টিভি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এদেশে। প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, মুক্তিযোদ্ধা সাইমন ড্রিঙ্কের দীর্ঘ স্বপ্নের বাস্তবায়ন ছিল একুশে টিভি। ব্রিটিশ হলেও সাইমন ড্রিঙ্ক ছিলেন বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত টিভি চ্যানেলটির নাম রেখেছিলেন বাঙালির অনন্য গৌরবের বায়ান্নের একুশের নামে- একুশে টেলিভিশন। ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটি। অভিজ্ঞ সাংবাদিক সাইমন ড্রিঙ্কের নেতৃত্বে বাংলাদেশের এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিক রাতারাতি একুশে টেলিভিশনকে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ “সেক্যুলার” (এদেশের কিছু মানুষ চোর, বাটপার, ভেজালকারী, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষকদের চেয়েও এই শব্দটিকে বেশি ঘৃণা করে) দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত এই টিভি চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বৈরীতারও মুখোমুখিতে পড়ে। দেশের প্রগতিবিরোধী ধর্মান্ধ, সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী শুরু থেকে এই চ্যানেলের বিরুদ্ধে নানা প্রকার কটূক্তি, নিন্দা ও কুৎসা রটনা করতে থাকে। এই সামপ্রদায়িক শক্তির আশ্রয়স্থল ও প্রকাশ্য প্লাটফর্ম বিএনপি-জামায়াতের প্রবল নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় একুশে টিভিকে। তাই ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রথম আক্রোশের শিকার হয় একুশে টিভি। নানা প্রকার চাপ, মামলা ইত্যাদি সৃষ্টি করে একুশে টিভির সমপ্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান বন্ধু সাইমন ড্রিঙ্ককে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ যাদের পছন্দ নয়, প্রগতি, মানবতা, নারীর প্রতি সম্মান প্রদান যাদের পছন্দ নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসামপ্রদায়িকতা যাদের পছন্দ নয় তাদের সংখ্যা এদেশে কম নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে শুধু বিএনপি জামায়াত নয়, আওয়ামী লীগেরও অনেকে উপরিভক্ত বিষয়গুলোকে পছন্দ করে না। ফলে যে ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যম এসবের বিরুদ্ধে তাদের প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে এই-অপশক্তি। যেসব কারণে একদিন একুশে টিভি আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়েছিল দুই দশক পর একই কারণে একাত্তর টিভি বা অন্যান্য কয়েকটি গণমাধ্যম যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসামপ্রদায়িকতার প্রতি অবিচল এবং একই সঙ্গে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও অপসংস্কৃতি বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে তারা আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
জনগণের বিশাল একটি অংশ মুক্তবুদ্ধি, নারী স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসামপ্রদায়িকতার ঘোরতর বিরোধী তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এদের মনোজগৎ মধ্যযুগীয় অন্ধকারে নিমজ্জিত। যা কিছু সত্য, সুন্দর ও শোভন তার বিরোধিতা করাই যেন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এরা ধর্মীয়ভাবে চরম অসহিষ্ণু। অন্য ধর্মের প্রতি তো বটেই নিজ ধর্মের ভিন্ন তরিকার মানুষের প্রতিও এদের আচরণ অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অমানবিক।
২. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। আইইডিসিআরের পরিচালক। তিনি ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ফেলো। বিখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী এই অধ্যাপক এমবিবিএস করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে। কোভিড-১৯ শুরুর দিকে তিনি প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হয়ে প্রতিদিন আপডেট দিতেন। ব্যস শুরু হয়ে গেল কিছু মানুষের বিকৃত অভিরুচির নগ্ন আক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রসঙ্গের বাইরে এই নারীর পোশাক নিয়ে ঘৃণ্য ও আপত্তিজনক মন্তব্য। সেব্রিনার অপরাধ কী? আমরা ধরে নিতে পারি সাধারণ বাঙালির সাজসজ্জাই হয়েছে অনেকের চক্ষুশুল। তিনি হিজাব পরেননি। এবং সম্পূর্ণ আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাষায় তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরতেন। এই অপশক্তি বারবার নারীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ধর্ষণের জন্য এরা ধর্ষকের বিরুদ্ধে যত না সোচ্চার তার চেয়ে বেশি নারীর পোশাক, জীবনযাপন নিয়ে। এরা ধর্ষণের জন্য দায়ী করে নারীর পোশাককেই। কিন্তু যখন কোনো শিশু ধর্ষিত হয়, যখন হিজাব পরা কোনো নারী ধর্ষিত হয়, যখন ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হয় তখন তার কোনো সদুত্তর তারা দিতে পারে না। যখন মাদ্রাসায় শিশুরা বলাৎকারের শিকার হয় তখন তারা সে ধর্ষক ইমাম বা শিক্ষকের ওপর শয়তান ভর করেছিল বলে যুক্তি দেখায়।
একাত্তর টিভিসহ দেশের প্রগ্রতিপন্থী মানবিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির সংবাদমাধ্যমগুলোকে আক্রমণ করছে যারা তারাই সমাজে সামপ্রদায়িকতা, মৌলবাদ, দুর্নীতি ও ভণ্ডামীকে লালন করেন। ধর্মের নামে অধর্মের কথা বলেন। এরাই ওয়াজ-নসিহতের নামে ধর্মীয় মিথ্যাচার প্রচার করেন। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেন। নারীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য প্রদান করেন। এরাই ধর্মকে অন্যদের কাছে হাস্যকর করে তোলেন-সাঈদিকে চাঁদে দেখা গেছে, করোনার সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়েছে, বিল গেটসের সঙ্গে কথা হয়েছে, ইংলিশ লিগে ফুটবল খেলেছে ইত্যাদির মতো, মিথ্যা, বানোয়াট গুলতানিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে। আর এসব নিয়ে যখন প্রশ্ন তোলা হয় তখন সে মিডিয়াকে বর্জনের ডাক দেয় তারা।
একাত্তর টিভির অপরাধ তারা এ ধরনের ওয়াজকারী তথাকথিত মাওলানাদের জনতার মুখোমুখি করে। তারা মাদ্রাসা শিক্ষার পশ্চাদপদতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে। তারা নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস অপরাধের তীব্র প্রতিবাদ করে। এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।
একাত্তরসহ কয়েকটি টেলিভিশন এবং মিডিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মকে কটাক্ষ করার অভিযোগ যারা তোলে তারা নিশ্চুপ ও প্রতিবাদহীন থাকে যখন তথাকথিত মাওলানারা করোনাভাইরাস বলে কিছু নেই, করোনাভাইরাস আছে বিশ্বাস করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে, করোনাভাইরাসের সঙ্গে আলাপ হয়েছে ইত্যাদি বলে পক্ষান্তরে ধর্মকেই বিতর্কিত এবং হাস্যকর করে তোলে। এইসব তথাকথিত মাওলানাদের যখন মিডিয়ার মুখোমুখি করে সত্য প্রকাশের চেষ্টা করা হয় তখন তাকে ধর্মীয় অবমাননা বলে প্রচার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হয়। আসলে তো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা উচিৎ তাদের বিরুদ্ধে যারা অন্তসারশূন্য ও মিথ্যা তথা দিয়ে ইসলাম ধর্মকে খাটো করছে।
৩. এইসব অপপ্রচারকারী কারা? আমরা তাদের চিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে এরা ফতোয়া দিয়েছিল নৌকায় ভোট দিলে বউ তালাক হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধকে শিরিক বলেছিল। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তিকে মালে গণিবত বলে আখ্যা দিয়েছিল। পাকিস্তান রক্ষায় রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গঠন করেছিল। এরাই পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছিল। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে তদবির করেছিল। এরা বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিল। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংবিধান ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিয়েছিল। সংবিধান ও রাষ্ট্রকে সামপ্রদায়িক করে তুলেছিল। বাংলাকে আফগানিস্তান বানাতে চেয়েছিল। দেশে জঙ্গি গড়ে তুলেছিল। আইএস স্টাইলে ইসলামিক স্টেট গড়ার চেষ্টা করেছিল। এরা ওয়াজের নামে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে। জনগণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে দেশের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করে। নারীদের অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে। আর এই কথাগুলো যারা তুলে ধরে, প্রতিবাদ করে উল্টো তাদের ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারী, ধর্মবিদ্বেষী বলে প্রচার করেন।
এই গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল একুশে টিভিকে (বর্তমানে একুশে টিভির নীতি, পরিচালনা ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই)। এখন শিকার হয়েছে একাত্তর টিভি। নামের কারণে প্রথমেই এ দুটি চ্যানেল তাদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। আর নীতি ও লক্ষ্যের কারণে প্রতিক্রিয়াশীলদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধু একাত্তর নয়, দেশের যেসব সংবাদমাধ্যম মুক্তচিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তার সবকটিই ওই অপশক্তির আক্রমণের শিকার।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৭১ টিভির বিরোধীরা মূলত একাত্তরের চেতনাবিরোধী। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করেছি। যা প্রত্যক্ষ করেছিলাম দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের সময়ে। অনেক আওয়ামী লীগ ঘরানার মানুষকে দেখেছি তারা সাঈদীকে একজন ইসলামিক স্কলার বা ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে মনে করতেন। একাত্তর টিভি বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরু। তারপর এর সঙ্গে গলা মিলিয়ে সামিল হয়েছে আজহারী থেকে শুরু অনেকে। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম সে তালিকায় অনেক আছেন, ফেসবুকের আইডিতে যাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা বর্তমান সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি বা স্ট্যাটাস আছে।
এই বিষয়টি আমাকে হতাশ করেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধারণ করে। সংবিধানে সকল ধর্মের সমান অধিকারের কথা আওয়ামী লীগই সন্নিবেশিত করেছে। এই দলের গঠনতন্ত্রেও তার উল্লেখ আছে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যার মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। কিন্তু দুঃখজনক হলো সে দলের অনেকেই এই চেতনায় বিশ্বাস করে না। সম্ভবত ছাত্রলীগের বর্তমান সদস্যদের অধিকাংশই জানে না ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র কী। কিংবা জানলেও তার তাৎপর্য বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ করলেও তাদের আচরণে সামপ্রদায়িক আচরণ বিদ্যামান। বঙ্গবন্ধু যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে সংগঠনটি।
এ কথা এখন স্বীকার না করে উপায় নেই যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ থাকলেও, রাষ্ট্রীয় দর্শনে এখনো ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধারণ করলেও সমাজ এখন পুরোটাই জামায়াতি ভাবধারায় বিশ্বাসীদের দখলে। মানুষ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ধর্মান্ধ, রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল ও সামপ্রদায়িক। সমাজ আগের চেয়ে অনেক বেশি অসহিষ্ণু, দুর্নীতিপরায়ণ, নিষ্ঠুর, ধর্ষণপ্রবণ অমানবিক হয়ে পড়লেও এর থেকে পরিত্রাণের পরিবর্তে কে কার চেয়ে বেশি ধার্মিক তা দেখানোর প্রতিযোগিতা বেড়েছে সমাজে। মানুষকে মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষার পরিবর্তে সমাজে বকধার্মিক বৃদ্ধিরই প্রতিযোগিতা চলছে।
আজ তারা একাত্তর টিভি বয়কটের ডাক দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে। এটাতে সফল হলে অন্য টেলিভিশন বা মিডিয়ার পেছনে লাগাবে একইভাবে। কাজেই দেশের প্রগতিমনস্ক মিডিয়াগুলোকে একযোগে এবং একজোট হয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। এরাতো দৃশ্যত অপশক্তি। সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদী গোষ্ঠীটিকেও চিহ্নিত করে তাদের মুুখোশও উন্মোচন করা দরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে। মনে রাখতে হবে চিন্তার স্বাধীনতা যারা চায় না, মুক্তচিন্তাকে যারা বাধাগ্রস্ত করে তারা শুধু গণতন্ত্রেরই শত্রু নয়, তারা মানবতারই শত্রু। চেহারাটি ভিন্ন হতে পারে কেবল।
এক্ষেত্রে জার্মান ধর্মযাজক কবি ও লেখক মার্টিন নিম্যোলারের বিখ্যাত কবিতা ‘ফার্স্ট দে কাম’ বা ‘ওরা প্রথমে এসেছিল’ স্মরণ করতে চাই।
কারণ কবিতাটি থেকে অনেক শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে।
“যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল,
আমি কোনো কথা বলিনি
কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।
তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের
লোকদের ধরে নিয়ে গেল আমি
নীরব ছিলাম
কারণ আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে এলো
ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে
মারতে আমি তখনও চুপ হয়ে
ছিলাম,
কারণ আমি ইহুদি নই।
আবারও আসল ওরা ক্যাথলিকদের
ধরে নিয়ে যেতে আমি টু শব্দটিও
করিনি
কারণ আমি ক্যাথলিক নই।
শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে
ধরে নিয়ে যেতে,
আমার পক্ষে কেউ কোনো কথা বলল না
কারণ, কথা বলার মতো তখন
আর কেউ বেঁচে ছিল না।”
লেখক : কবি ও সাংবাদিক