বিচারের বাণী ও একজন অসহায় (!) মুক্তিযোদ্ধা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের ১৮ মার্চের একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে ভেতরটা একেবারে মোচড় দিয়ে উঠল। পত্রিকাটির শেষ পৃষ্ঠায় সবার ওপর তিন কলাম জুড়ে (পত্রিকাটি ছয় কলামে ছাপা হয়) শিরোনাম, ‘বেপরোয়া হাতকাটা বাহিনী’। চকিতে মনে পড়ল রগকাটা বাহিনীর কথা। চট্টগ্রামবাসী বিশেষ করে রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলাসহ আশি ও নব্বই দশকের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের নাম শিবিরের রগকাটা বাহিনী। সে সময় পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের দাপট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, কমার্স কলেজ ছিল শিবিরের দখলে। শুধু চট্টগ্রাম নয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর কারমাইকেল কলেজসহ সারা বাংলাদেশেই ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী শিবিরের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে, অত্যাচারিত হয়ে তাদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়েছে। শিবিরের রগকাটার শিকার হয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছে। শিবির প্রকাশ্যে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে।
১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবালোকে ছাত্রনেতা আবদুল হামিদের হাত কেটে নেয় শিবিরের কর্মীরা। হামিদ ছিলেন এরশাদের ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। কাটা হাত নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছিল ইসলামী ছাত্র শিবির। এরশাদ ক্ষমতায় থাকার পরও তার দলের নেতা বিচার পায়নি। এমনই ছিল শিবিরের প্রতাপ।
জিয়ার আমলে উত্থান ঘটেছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের। পরে এরশাদ খালেদার সময়ে প্রচণ্ড দাপট নিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এই সংগঠন। তাদের দাপট ও তাণ্ডব ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের আগে পর্যন্ত ছিল।
শিবিরের দাপট কেমন ছিল এবং আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পরও এখন কী অবস্থায় আছে তা বোঝাতে নিবন্ধ না লিখে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, ছয়বারের সংসদ সদস্য ও দুইবারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য তুলে ধরছি। গত ৯ মার্চ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। শিবিরের হামলায় তিনি নিজেই মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। সেদিনের এবং তারপর দীর্ঘদিনেও তার বিচার না হওয়ার সব ঘটনা তার বক্তব্য উঠে এসেছে। পাঠকদের জন্য তার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘৮ মে, ১৯৯২ সাল। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। জামায়াত-শিবির তাদের লালিত-পালিত। ঘটনা আমার নিজের চোখে দেখা। আমি ফটিকছড়ি গিয়েছিলাম ছাত্রলীগের সম্মেলনে। আমার সঙ্গে প্রয়াত নেতা ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারও ছিলেন। সম্মেলন চলছিল, দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ শিবিরের একটি সশস্ত্র বাহিনী ট্রাকে-বাসে এসে আক্রমণ চালায়। সেখানে আমাদের ছাত্রলীগকর্মী জমির উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। চারদিকে ছোটাছুটি শুরু হলে আমি এবং রফিকুল আনোয়ার পার্শ্ববর্তী স্কুলের অফিসে আশ্রয় নিই। দেখলাম, পুলিশের সামনে দিয়ে ট্রাকে-বাসে করে অস্ত্র হাতে নিয়ে শিবিরের সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে যাচ্ছে।’
নৃশংস হামলার বয়ানে মোশাররফ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমরা মোহাম্মদ ত্বকীর হাটে পৌঁছালাম। হঠাৎ চারদিক থেকে একই পোশাক পরা ২০-২৫ জন সশস্ত্র লোক এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। এক মিনিটের মধ্যে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে বললাম, আমি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তোমরা কী চাও ? হারুন বশরকে গাড়ি থেকে বের করে চাকার ওপর বসাল। ব্রাশফায়ার করার মুহূর্তে আমি সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি বললাম, সে একজন পঙ্গু মানুষ, তাকে ছেড়ে দাও। ডোন্ট কিল হিম, ইফ ইউ ওয়ান্ট কিল মি। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ব্রাশফায়ার করে হারুন বশরকে খুন করল।’
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এরপর আমার মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে নাছির বলল, ‘আঁরে চিনি ল, আঁর নাম নাসির।’ (আমাকে চিনে নে, আমার নাম নাসির) আমার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হল। রাইফেলের বাট দিয়ে আমাকে বেদম মারধর করল। তখন আমার গাড়ির পেছন থেকে তখনকার ছাত্রলীগ নেতা জসীম উদ্দিন শাহ, ইউনূস গণি, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ বের হয়ে আসল। সন্ত্রাসীরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধর, ধর বলে তাদের ধাওয়া শুরু করল। এই সুযোগে আমি পাশের একটি খালে লাফ দিই। সেখানে পাটিপাতা ছিল, এর ভেতরে আমি শুয়ে থাকি। সন্ত্রাসীরা আবার ফিরে এসে এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার শুরু করল। কিন্তু অন্ধকারে তারা আমাকে দেখতে পায়নি। আমাকে না পেয়ে চলে গেল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে খালপাড় থেকে কিছুদূর গেলাম। হেঁটে স্থানীয় আবদুল্লাহপুর বাজারে পৌঁছলাম।’
মোশাররফ হোসেন যে নাসিরের কথা বললেন সে নাসির ‘শিবির নাসির’ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে জেলে থাকলেও এখনও উত্তর চট্টগ্রামে তার নামে চাঁদাবাজি চলে। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও নাসিরের তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। জেলের ভেতর রাজকীয়ভাবেই আছে সে। বলা যায় জেলে সে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আছে। বাইরে থাকলে বরং তার জীবনসংশয়ের আশঙ্কা ছিল।
মোশাররফের ওপর হামলার নেতৃত্বদাতা নাসির উদ্দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার এবং একসময়ের পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। একটি সময় ছিল ‘শিবিরের নাসির’ নামটি ছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের কাছে এক বিভীষিকার নাম। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল পুলিশের অভিযানকালে চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাস এলাকা থেকে নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গত ২৩ বছর ধরে নাসির কারাগারে আছে।
ভয়ঙ্কর অপরাধী নাসিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় খুন, গুমসহ প্রায় ৩৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। সাক্ষীর অভাবে কয়েকটি মামলা থেকে খালাসের তথ্যও বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে এসেছে। মোশাররফের ওপর উক্ত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মামলায় মোট ২৬ আসামির মধ্যে নাসির এক নম্বর আসামি।
গত ১ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় সাক্ষী না আসায় ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা বিলম্বিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মোশাররফ। এর আগে, ২০১৭ সালের ২৬ মে ওই মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন মোশাররফ হোসেন। সেদিন নিহত রাজনৈতিক সহকর্মীদের চোখের সামনে হত্যার বর্ণনা দিয়ে তিনি আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
মোশাররফ হোসেন আক্রান্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। কিন্তু নাসিরের বিচার সম্পন্ন করতে পারেনি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনা এখানে যা বললাম, হুবহু আদালতে আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। জজ সাহেবের সামনে বলেছি। আমি নাসিরকে কাঠগড়ায় শনাক্ত করেছি। এটা আমার চোখে দেখা। আমার চোখের সামনে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। নাসিরকে তো অবশ্যই ফাঁসি দেওয়া উচিত। সে এক নম্বর আসামি। সাক্ষীর অভাবে বিচার হচ্ছে না, এটা ভুল বক্তব্য। আমি নিজে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমার গাড়িচালক ইদ্রিস, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ তো এখনও আছে। প্রয়োজনে আদালতে তাদের জিজ্ঞেস করা হোক।’
ভাবতে খুব অবাক লাগছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী, বর্তমানে সংসদ সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিক অসহায়ের মতো বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন, প্রয়োজনে আবার সাক্ষ্য দিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু বিচার যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়, দোষীকে যেন শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় যে বা যারা দোষী, তাদের যেন আইনানুগভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’
রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিচার বিলম্বিত হলে বিচার পাওয়া না পাওয়া সমান কথা হয়ে যায়। আমি মনে করি, কারও না কারও গাফিলতির কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। যার কারণে হচ্ছে তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।’ কার কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে সে নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
বর্তমানে শিবির মাঠে নেই। প্রকৃতপক্ষে ছাত্ররাজনীতির মাঠে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন নেই। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগ, যুবলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
‘হাতকাটা বাহিনী’ শিরোনাম দেখে তাই বিচলিত হয়েছিলাম যে আবার কি জামায়াত-শিবির মাঠে নেমে পড়েছে? নাকি চরমপন্থী কোনো সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে? সংবাদটি পড়ে ভুল ভাঙল। পাঠকদের জন্য সংবাদটির উদ্ধৃতি দিচ্ছি, ‘কুড়িগ্রামের মজিদা আদর্শ মহাবিদ্যালয় এর প্রভাষক আতাউর রহমানের ডানহাত রক্ষা করতে পারেননি চিকিৎসকেরা। এখনো প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বাঁ হাতটি রক্ষার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সন্ত্রাসীদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এই শিক্ষকের দুই পায়েও অস্ত্রোপচার লাগবে।
গত মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে রাজারহাট উপজেলা ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় হামলার শিকার ওই শিক্ষক এখন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন। বুধবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে হামলার বর্ণনা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য এবং কুড়িগ্রামের কাঠালবাড়ি এলাকার সাধারণ মানুষের বয়ানে উঠে এসেছে ওই এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা হাত কাটা বাহিনীর নিষ্ঠুরতার কথা।
১০ বছর আগে যুবলীগের এক কর্মীর হাত কেটে একদল যুবক নাম পায় ‘হাত কাটা বাহিনী’। সেই থেকে এই বাহিনী কাঠালবাড়ি ও আশেপাশের এলাকায় মাদকব্যবসা চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আতাউর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তার বাবা আলতাফ হোসেন চৌধুরী ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। ওই ইউনিয়নের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আতাউরের বাবা। আতাউর জানালেন বাবার জায়গায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সেখানকার বর্তমান চেয়ারম্যান খয়বর আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা বারবার তার ওপর হামলা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার যারা তার উপর হামলা চালিয়েছেন তারা সবাই ‘হাতকাটা বাহিনীর’ সদস্য। এরাই গত মাসে তার বাড়িতে গুলি করেছে, ভাঙচুর চালিয়েছে। তখন মামলা করার জন্য কুড়িগ্রাম সদর থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের ফিরিয়ে দেন।’
ভাববার অবকাশ নেই যে, এই চিত্র বা পরিস্থিতি শুধু কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার। আজ কয়েকবছর ধরে রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যতগুলো রাজনৈতিক দাঙ্গাহাঙ্গামা হয়েছে তার অধিকাংশই ঘটেছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো এখন ছোটখাটো সমাবেশ করার সামর্থও হারিয়েছে। সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নিজেরাই নিজেদের লোকদের খুন করছে। এই প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। সামনে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কত কর্মী-সমর্থক নিজ দলের লোকের হাতে প্রাণ হারাবে তার সংখ্যা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
শিবির হাত কেটেছে, রগ কেটেছে বিরোধী পক্ষের। আর আজ আওয়ামী লীগের অনেকে এই সময়ে নিজেরাই নিজদলের লোকের হাত কাটছে। বিরোধীদলবিহীন মাঠে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে মারামারি দেখে আশঙ্কা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ আওয়ামী লীগ দুর্বল হলে, আওয়ামী লীগ হেরে গেলে কার্যত বাংলাদেশই হেরে যাবে। যত ত্রুটিই থাক, যত বিচ্যুতিই থাক এখনও একাত্তরের বাংলাদেশের যতটুকু আছে তা এই দলের কারণেই আছে।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক