সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় কারখানাটির আশেপাশে যতগুলো স্থাপনা আছে তার প্রতিটি কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে কারখানার আশেপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এমনকি বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায়
লোহার পাত। বিস্ফোরণের পর চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে টিন ও লোহার টুকরো। আশেপাশের অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙে গেছে অনেক ঘরের কাচ। গত শনিবার বিকালে কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
এলাকাবাসী বলছেন, বিকট শব্দ ও কম্পনে তারা ভয় পেয়ে যান। কারো মনে হয়েছে ভূমিকম্প হয়েছে। কেউ ভেবেছেন বোমা বিস্ফোরণ হলো।
কদমরসুলের সীমা অক্সিজেন কারখানা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জাহানপুর এলাকা। এলাকাটির বাসিন্দারা গতকাল বিকালে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান।
কারখানা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে বাড়িতে ছিলেন সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে মনে করেছিলাম মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘরের দরজা–জানালা ভূমিকম্প হওয়ার মতো কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে ঘরের লোকজন
তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণে লোহার পাত আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায়। লোহার পাতের আঘাতে সামশুল আলম নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বিকট শব্দে আল ছাফা রি–রোলিং মিলটি কেঁপে ওঠে এবং ভেঙে যায় মিলের কাচ। বিস্ফোরণে হাতে কাচ পড়ে আহত মিলের শ্রমিক জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার তখন ডিউটি ছিল না। মিলের ভেতরে আমাদের কক্ষে ঘুমাচ্ছিলাম। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে উঠে পড়ি।
তাড়াতাড়ি মিল থেকে বের হয়ে আসি। কিছুক্ষণ পর দেখি কক্ষের কাচ ভেঙে আমার হাত ও পায়ে ক্ষত হয়েছে।
মিলটির শ্রমিক দুর্জয় ত্রিপুরা বলেন, বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে মিলের ভেতর ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। কোথা থেকে বিকট শব্দ এল বুঝতে পারিনি। ভয়ে আমরা মিল থেকে বের হয়ে পড়ি।
কারখানার পাশে কদমরসুল গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, প্রথমে বড় একটি শব্দ শুনি। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এখানকার অনেকের ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে বলে জানতে পারি।
সীমা অক্সিজেন কারখানার বিপরীতে রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল কারখানার টিনের চালা ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেছে। পাশে অপর একটি কারখানার চালাও উড়ে গেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে।
সীমা অক্সিজেনের শ্রমিক মানিক আধা কিলোমিটার দূরে বাড়িতে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি বেলা দুইটার দিকে কারখানা থেকে চলে আসি। বিকালে বাসায় বসে বিকট শব্দ শুনি। শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। পরে শুনি, আমাদের কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে।