কামরুল হাসান (১৯২১–১৯৮৮)। বরেণ্য চিত্রশিল্পী। প্রকৃত নাম আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তাঁর আঁকা চিত্রকর্মের নিজস্ব রীতি ছিল লৌকিকতা আর আধুনিকতার মিশেল। তিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি মনোগ্রাম তৈরি করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিল্পের এই মাধ্যমটিতে কামরুল হাসান আবহমান বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি এক কথায় বাংলার সামগ্রিক রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। কামরুল হাসানের জন্ম ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর কলকাতায়। সেখানে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। দেশবিভাগের পর চলে আসেন ঢাকায়। দেশবিভাগের পর কামরুল হাসান ঢাকা চলে আসেন এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঢাকায় একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন (১৯৪৮)। ঢাকায় চিত্রকলার চর্চা ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্রুপ। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের নকশা কেন্দ্রের প্রধান নকশাবিদ নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের স্বাধীকার ও অসহযোগ আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সহ যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে, অন্যায়–অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিল্পী ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার। এ সময় পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের রক্তপায়ী, হিংস্র মুখমণ্ডল সম্বলিত একটি পোস্টার এঁকে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পোস্টারটির শিরোনাম: ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে।’ তাঁর চিত্রকর্ম গণতান্ত্রিক চেতনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর স্বদেশপ্রেমেরই পরিচয়বাহী। শিল্পীর আঁকা বেশ কিছু চিত্রকলা দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংকটে জনসাধারণকে প্রতিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। তেমনি একটি ছবির শিরোনাম ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার রক্তপিপাসু, হিংস্র মুখমণ্ডল নিয়ে আঁকা একটি পোস্টারের শিরোনাম ছিল এটি। চিত্রকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য কামরুল হাসান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। সেসবের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৫), কুমিল্লা ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), চারুশিল্পী সংসদ সম্মান (১৯৮৪), বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫) এবং কাজী মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৫) উল্লেখযোগ্য। তাঁর ‘তিনকন্যা’ ও ‘নাইওর’ চিত্রকর্ম অবলম্বনে যথাক্রমে যুগোশ্লাভীয়া সরকার (১৯৮৫) ও বাংলাদেশ সরকার (১৯৮৬) দুটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।