কাপ্তাই কেন্দ্র থেকে দূরত্ব আট কিমি বিদ্যুৎ পেল ৬২ বছর পর

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

১৯৬০ সালে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেকে পুনর্বাসিত হন বিভিন্ন স্থানে। কথা ছিল তাদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। সেটি তো হয়নি উল্টো অনেক পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা টাকার বিনিময়ে বা নানাভাবে দেন-দরবার করেও বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসতে পারেননি। তবে দুই মাস আগে তাদের হতাশার অবসান হয়েছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম, বনভান্তের স্মৃতি মন্দির এলাকা, কামিলাছড়ি, জীবতলীসহ ১৩টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ৬২ বছর পর বিদ্যুতের আওতায় এলো মগবান ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ৫ হাজার বাসিন্দা।

রাঙামাটি বরাদম সুরবালা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের কম্পিউটার প্রশিক্ষক মেওয়াইচিং মারমা বলেন, বিদ্যুৎ আসার ফলে আমরা অনেক খুশি। প্রায় দুই মাস হলো এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ আসার ফলে আমরা এখন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ক্লাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারছি। বরাদম এলাকার অমিয় চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ আসায় আমরা খুব খুশি। আমরা এখন বাসায় ফ্যান, ফ্রিজ, বাতি সবকিছু ব্যবহার করতে পারছি। মগবান ইউনিয়নের বরাদমের আওলাদ বাজার এলাকার বাসিন্দা মানুচিং মারমা বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার আগে খুবই কষ্ট হত। সোলার দিয়ে কোনোরকম দিন যাপন করতে হত। এখন বিদ্যুতের পাখায় বাতাস খেতে পারছি।

মগবান ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার পলাশ কুমার চাকমা বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছি তাতেই খুশি। কিন্তু আমাদের একটা দাবি থাকবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যাতে পাই। রাঙামাটি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা বলেন, এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বঞ্চিত ছিল। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ৬২ বছর পর আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমরা এলাকার জনগণ এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। বিদ্যুৎ আসার পর এই এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও জীবনমানের সমৃদ্ধি দেখছেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক।

তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জল বড়ুয়া বলেন, দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শতভাগ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হয় তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। ৫৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অধীনে ১৬টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন কেভির ১ হাজার ৯শ ৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে। তিনি বলেন, এ এলাকায় বিদ্যুতায়নের ফলে কাপ্তাই আসামবস্তী সড়কে নতুন রিসোর্ট এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটাকা পেয়ে দিলেন ভোট, পরে দেখেন জাল নোট
পরবর্তী নিবন্ধপিতার খুনের মামলায় তৎপর থাকায় ছেলেকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা