কানে ইতিহাস গড়ে যা বললেন বাঁধন

| শুক্রবার , ৯ জুলাই, ২০২১ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম নায়িকা হিসেবে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলছেন, ছবিটির অংশ হতে পেরে তিনি গর্ববোধ করছেন। বিশ্ব চলচ্চিত্রের মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবের ৭৪তম আসরের ‘আঁ সেত্রাঁ রিগা’ বিভাগে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের এ ছবি। গত বুধবার ছবির প্রর্শনীর আগে দক্ষিণ ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের দুবুসি থিয়েটারের সামনে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির প্রিমিয়ারের লাল গালিচায় হেঁটেছেন বাঁধন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁধন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কানে অংশ নেওয়া আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। এমন সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। আমি ছবিটির অংশ হতে পেরেছি বলে গর্বিত। খবর বিডিনিউজের।
জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তের অংশ হতে পেরে ছবির পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাঁধন। নারীকেন্দ্রিক গল্পের এ ছবিতে মধ্য বয়স্ক এক সহকারী অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। বাঁধন বলেন, পুরো কৃতিত্ব পরিচালক সাদের। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা করা কঠিন। নারীর দৃষ্টিতে সমাজকে কেউ দেখতে চায় না, আবার দেখাতেও চায় না। পারিপার্শ্বিক কারণে নারীরা তা পারে না; আর ছেলেদের পক্ষে বিষয়টি বুঝতে পারা কঠিন। কেউ কেউ বুঝলেও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঝুঁকি নিতে চান না। এ ছবিতে নারীকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা বোঝার ক্ষমতা খুব কম পুরুষেরই রয়েছে। সাদ আলাদাভাবে চিন্তা করতে পেরেছে। আমাকে ইতিহাসের অংশ করার জন্য সাদের প্রতি সারাজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রায় দেড় বছর ধরে ছবির কাজ শেষ করার পর পুরো ছবিটি দেখার সুযোগ হয়নি বাঁধনের। পরিচালক সাদ তাকে জানিয়েছিলেন, কানে গিয়ে পর্দার রেহানার সঙ্গে দেখা হবে বাঁধনের।
এক ফরাসি নারী দর্শক হলের ভেতরে বাঁধনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন; রেহানার যন্ত্রণা, জেদ ও দৃঢ় মনোবল তার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই দর্শকের সঙ্গে বাঁধনের আলিঙ্গনের মুহূর্ত হলজুড়ে মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে উঠে; সেই মুহূর্তে জোর চেষ্টায়ও নিজের কান্না লুকাতে পারেননি বাঁধন। দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় বাঁধন অনুভব করেছেন, রেহানা শুধুই বাংলাদেশের নারীদের নয়; বিশ্বের নানা প্রান্তে হাজারও নারীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। রেহানার মুখের ভাষা না বুঝলেও মনের ভাষা, অভিব্যক্তির মাঝে নিজেদের খুঁজে নিয়েছেন দর্শকরা। ডিনার থেকে ফেরার পথে এক ফরাসি নারী বাঁধনকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন, তুমি তো রেহানা, তোমার ছবিটি দেখেছি। দুর্দান্ত। আমি কী তোমায় একটু ছুঁতে পারি? বাঁধন বলছেন, এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তিনি বোকা বনে গেয়েছিলেন। তাকে এভাবে কেউ চিনবে সেটা জীবনে কল্পনা করার সাহসই পাননি। ছবিটি কানে ছবির প্রদর্শনীর পর ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। ছবিটিকে ঘিরে বাংলাদেশের দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ এখন চূড়ায়। এই প্রত্যাশায় বাড়তি চাপ অনুভব করছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁধন বলেন, প্রত্যাশার চাপ আগে থেকেই ছিল। আমি বিশ্বাস করি, সাদ একদিন অস্কারও পাবে। সাদ অসম্ভব সৎ ও মেধাবী একজন নির্মাতা। নির্মাতা হিসেবে ওর নিজের মেধাটা কাজে লাগাতে পারবে। আমি অ্যাক্টর, আমাকে কাজে লাগাতে হবে। আমার জন্য সুযোগ কম। জীবনের অর্ধেক প্রায় শেষ। বাকি জীবনে সুযোগ হবে কি না, জানি না। কিন্তু আমার চেষ্টার ঘাটতি থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে স্ত্রী হত্যায় স্বামী গ্রেপ্তার ভাইয়ের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় নির্বিঘ্নে ঘুরছে মানুষ বসেছে জমজমাট পশুর হাটও