আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ করোনার ভ্যাকসিন পাবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান। ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে বাংলাদেশে। জনপ্রতি ২ ডোজ করে ২৫ লাখ মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। কিন্তু ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন কারা পাবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে সরকারকে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম দফাতেই সব বাসিন্দাকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। যার কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা করা হলেও এখন নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি করোনার এই ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে সরকার। ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (৩) মুহম্মদ শাহীন ইমরান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়েছে।
জেলা পর্যায়ের ১৬ সদস্যের কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন জেলাপ্রশাসক (ডিসি)। ডিসিকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। আর জেলার সিভিল সার্জন কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যান্যের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপার, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক/সদর (জেনারেল) হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সদর পৌরসভার মেয়র, পরিবার-পরিকল্পনার উপ-পরিচালক, আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা তথ্য অফিসার, জেলাপ্রশাসক কর্তৃক মনোনীত ২ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি, আইসিটি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার এবং স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে এমন দুটি এনজিও’র ২ জন প্রতিনিধিকে (জেলাপ্রশাসক কর্তৃক মনোনীত) কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
কমিটির কার্যপরিধি : প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চিঠিতে এ কমিটির ৫টি কার্যপরিধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীগণ, সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন। তালিকা প্রণয়নে উপজেলা কমিটিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান। করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করা। ভ্যাকসিন প্রদানকালীন ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্রসমূহে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
কাঁটছাট হতে পারে তালিকা : মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামেও অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি তালিকা তৈরি করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। করোনা মোকাবেলায় সম্মুখযোদ্ধাদের সামনে রেখে ৫টি সেক্টরের (বিভাগের) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাখা হয় ওই তালিকায়। ৫ সেক্টরের (খাতের) মোট ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৮ জনের তালিকা তৈরি করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। জনপ্রতি ২টি ডোজ হিসেব করে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ভ্যাকসিনের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ৫ সেক্টরের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, গণমাধ্যম, শিক্ষা বিভাগ এবং সামরিক-আধাসামরিক ও আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওই অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়। ভ্যাকসিন আসলে এই ৫ খাতের তালিকাভুক্তরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়। তবে প্রাথমিকভাবে তৈরি করা আগের তালিকায় কাঁটছাট হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, এখন যেহেতু কমিটি করা হয়েছে এবং কমিটিকে নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছে; সে হিসেবে আগের তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে আমরা ধারণা করছি।
চট্টগ্রামে নতুন জেলাপ্রশাসক যোগদানের পর এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।