কাজে যোগ দেননি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

গতকাল বৃহস্পতিবারও কাজে যোগ দেননি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার চমেক ক্যাম্পাসে সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে বুধবার সকাল থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। যা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও পালন করেছেন তারা।
কর্মবিরতির মধ্যেই মঙ্গলবারের ঘটনায় চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুরে হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথের সামনে তারা এ মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে ‘প্রশাসনের ভূমিকা কী? চলছে লড়াই চলবে/চিকিৎসক সমাজ লড়বে, চিকিৎসকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা/পুরো জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ’ সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াতে দেখা যায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের।
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসা সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, কোভিড জোনে (করোনা ইউনিটে) ইন্টার্নদের দায়িত্ব নেই। সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতেও রোগী সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধেক। আগে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকতো। এখন রোগী সংখ্যা চৌদ্দশ’র মতো। সিনিয়র ডাক্তার ছাড়াও প্রশিক্ষণার্থী অনেক চিকিৎসক আমাদের এখানে দায়িত্ব পালন করেন। সবমিলিয়ে ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতেও চিকিৎসা সেবায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। এরপরও তাদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা যাতে কোনো ভাবেই ব্যাহত না হয়, আমরা সে দিকটায় তৎপর আছি। বেশকয়টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (গতকাল) বৈঠক করেছেন জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়াই কিন্তু আমরা কোভিড রোগীদের সুন্দর ভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এখনো তেমন সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করছি না। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা তাদের দাবি শুনেছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছি। এ জন্য একটি কমিটিও করেছি। কমিটি এর মধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা তো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। এমন তো না যে- শাস্তির দাবি জানানো মাত্র কাউকে ধরে শাস্তি দিয়ে দিলাম। এ প্রক্রিয়ায় একটু সময় তো দিতেই হবে। এটাই আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা সেটা বুঝতে চায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকরা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে নাম প্রকাশ করে তাঁরা কেউ এ বিষয়ে বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, মূলত ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই হাসপাতালের প্রাণ। সকাল থেকে দুপুর ২টা বা আড়াইটা পর্যন্ত সিনিয়র চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে থাকেন। এ সময় তারা রাউন্ড দেন, রোগী দেখেন। তবে দুপুর আড়াইটার পর রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রোরসহ প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা থাকলেও চিকিৎসা সেবায় ভাইটাল (মূল) ভূমিকাটা ইন্টার্নরাই পালন করেন। বিশেষ করে রাতের দিকে ইন্টার্ন ছাড়া তো অন্য চিকিৎসকদের খুুঁজে পাওয়াও ভার। যার কারণে তাদের (ইন্টার্ন চিকিৎসকদের) অনুপস্থিতিতে সেবা তো কিছুটা ব্যাহত হবেই। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এতে ভোগান্তির শিকার হন রোগীরাই।
তাই যত দ্রুত সম্ভব এ সংকটের সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। একই সাথে আরো সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও কাজে যোগ দিতে আহবান জানিয়েছেন তাঁরা।
ইন্টার্ন ডক্টর এসোসিয়েশন (আইডিএ)’র তথ্য অনুযায়ী- চমেক হাসপাতালে বর্তমানে ৩০৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ৩০৭ জনের সবাই কর্মবিরতি পালন করছেন বলে দাবি করেছেন আইডিএ’র আহ্বায়ক ডা. ওসমান গণি। চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কথা কাটাকাটির জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সংঘর্ষে জড়িত দুই গ্রুপের একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং অপর পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে সামপ্রতিক সময়ে আরো বেশ কয়বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারের রাতের ঘটনায় বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের পরও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধসাগরিকায় যুবকের লাশ উদ্ধার