কাজী কাদের নেওয়াজ: দেশপ্রেম ও নিঃসর্গের কবি

| সোমবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কাজী কাদের নেওয়াজ। শিশুসাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কবি। লিখেছেন উপন্যাসও। ‘মরাল’ তার বহুল সমাদৃত কাব্যগ্রন্থ এবং ‘দাদুর বৈঠক’ তার সুপরিচিত শিশুরঞ্জক গদ্যরচনা। কাদের নেওয়াজ মুর্শিদাবাদ জেলার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে। তিনি স্থানীয় মাখরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স, ১৯২৫ সালে বহরমপুর কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯২৯ সালে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ (অনার্স) পাশ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বি.টি পাশ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও শেষ করেন নি। চাকুরী জীবনের শুরুতে কিছুদিন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন।
১৯৪৬ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রথমে নবকুমার ইন্সটিটিউশনে ও পরে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৫১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি এ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সরকারি স্কুল থেকে অবসরের পর ১৯৬৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মহেশচন্দ্র পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। কবি কাজী কাদের নওয়াজ অনর্গল লিখেছিলেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, সংস্কৃতি প্রভৃতি ভাষার সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল প্রখর। তাঁর প্রায় দশ হাজারের মত কবিতা তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ‘মরাল’ (কাব্য-১৩৪১), ‘নীল কুমুদী’ (কাব্য-১৯৬০), ‘দুটি পাখি দুটি তীরে’ (উপন্যাস-১৩৭৩), ‘উতলা সন্ধ্যা’, ‘দস্যু লাল মোহন’ (গোয়েন্দা কাহিনী), ‘দাদুর বৈঠক’ (স্মৃতিচারণমূলক গল্প কাহিনী-১৮৪৭) প্রভৃতি। ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’, ‘মা’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কবিতা। কবি কাজী কাদের নওয়াজের কবিতায় মাতৃভক্তি, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ, দেশপ্রেম ও প্রকৃতির নিঃসর্গের প্রতি ভালোবাসা সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। প্রেম ও পল্লীর শ্যামল প্রকৃতি তার কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯৬৩ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধষোল শহরে স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ চাই