কাঁচা মরিচের রসগোল্লা

সাফ্‌ফাত আহম্মদ খান | বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

রসগোল্লা শব্দটি শুনলেই কল্পনায় ভেসে উঠে সাদা তুলতুলে একখানা অমৃত স্বাদের মিষ্টান্ন যার ফলে জিভে পানি আটকানোই দায়। বাঙালির সংস্কৃতির সাথে নামটি একবারে মিশে আছে। এটিই মনে হয় বাঙালির আদি মিষ্টি যা এখনও দুই বাংলার মানুষের (বাংলাদেশ ও কলকাতা) কাছে তুমুল জনপ্রিয়।

রসগোল্লা নিয়ে বাংলায় অনেক কবিতা গল্প ও উপমা আছে। আন্তজার্তিকভাবে রসগোল্লার জিআই ট্যাগ স্বীকৃতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় রসগোল্লার সাথে যার নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি হলেন বিখ্যাত নবীন চন্দ্র দাশ বা নবীন ময়রা (মিষ্টির কারিগর) যাকে রসগোল্লার কলম্বাস বলে আখ্যায়িত করা হয়। ১৮৪৮ সালে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন অমৃত স্বাদের মিষ্টি যা শত বছর ধরে বাঙালির সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে আছে।

শোনা যায় একবার এক বালিকা নবীন ময়রাকে বলেছিল :
”চটচটে নয়, শুকনো হতে মানা,
দেখতে হবে ধবধবে চাঁদপানা;
এমন মিষ্টি ভূ-ভারতে নাই,
নবীন ময়রা, এমন মিষ্টি চাই।”

সেই বালিকার অনুপ্রেরণাতেই তার এই আবিষ্কার এবং পরবর্তীতে এই বালিকাই (ক্ষীরদমনি দেবী) তার সহধর্মিনী হন। ২০১৮ সালে বিখ্যাত নবীন চন্দ্র দাশের জীবনী নিয়ে কলকাতার পরিচালক পাভেল রসগোল্লা নামের একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন।

আমার এই লিখার উদ্দেশ্য কিন্তু রসগোল্লার ইতিহাস নয়। যুগের পরিবর্তনে অনেকেই পুরানো স্বাদকে নতুনভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। এই রসগোল্লা নিয়ে সমপ্রতি কিছু ফুড ব্লগারের ভিডিও দেখলাম- কাঁচা মরিচের রসগোল্লা। দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। এতো রসগোল্লা না রসিকতা।

সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত রসগোল্লা গল্পটির কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেল, “হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, ঝান্ডুদা তামাম হুঁড়িখানা কাউন্টারের ওপর চেপে ধরে ক্যাঁক করে পাকড়ালেন চুঙ্গিওলার কলার বাঁ হাতে, আর ডান হাতে থেবড়ে দিলেন একটা রসগোল্লা ওর নাকের ওপর। আর সঙ্গে সঙ্গে মোটা গলায় বললেন, ‘তুমি খাবে না? তোমার গুষ্টি খাবে। ব্যাটা, তুমি মস্করা পেয়েছ? পইপই করে বললুম, রসগোল্লাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে, তা তুমি শুনবে না!”

আমার কাছে কাঁচা মরিচের রসগোল্লার ব্যাপারটিও প্রথমে অনেকটা এরকমই জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা মনে হয়েছে। কাঁচা মরিচের রসগোল্লার রংও দেখতে এতটাই লোভনীয় যে তোমাদের একেবারে খাইয়েই ছাড়বে, মনে হবে একবার চেখে দেখি। সামাজিক মাধ্যম ঘেঁটে দেখলাম অনেক জায়গার মধ্যে কুমিল্লার একটি মিষ্টির দোকানের এই কাঁচা মরিচের রসগোল্লা বেশ জনপ্রিয় যদিও এর রেসিপি এখন অনলাইনেই পাওয়া যায়।

মূলত ছানার সঙ্গে কাঁচা মরিচ পিশে মিশিয়ে তা চিনির শিরায় ডুবিয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি। খেতে ঝাল ও মিষ্টির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। তবে ঝাল আছে বলে ডায়াবেটিক রোগীরা বেশি খেতে পারবেন কি না তা আমার জানা নেই।

নবীন বাবু বেঁচে থাকলে এই কাঁচা মরিচের মিষ্টি খেয়ে কী বলতেন সেটাই ভাবছি। যেকোনো জিনিসেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকবেই। তোমাদেরও যদি কারো কাঁচা মরিচের মিষ্টি খাওয়ার স্বাদ নিতে ইচ্ছা হয় তাহলে একবার পরখ করে দেখতে পারো। পরিশেষে আমার কাঁচা হাতে দু’লাইন লিখলাম,

‘রসের গোলক বাঙালির অমৃত এক সৃষ্টি
কাঁচা মরিচের সাথে যোগ হয়েছে মিষ্টি,
এমন ভোজনরসিক বাঙালি আর কোথাও পাবে নাকো তুমি
মিষ্টি কীভাবে খাওয়াতে হবে সেটা আমরা জানি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধউৎসবমুখর পরিবেশে লিও জেলার ৩১৫-বি৪ এর বার্ষিক সম্মেলন