কলিম শরাফী একজন স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় কলিম শরাফী গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রেখেছেন। প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকেছেন কয়েক দশক। কলিম শরাফীর জন্ম ১৯২৪ সালের ৮ মে ভারতের বীরভূমে। ১৯৫০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীত বিদ্যালয় দক্ষিণী থেকে সঙ্গীতে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু পাকিস্তান টেলিভিশনে অনুষ্ঠান পরিচালক হিসেবে। এরপর পাকিস্তান গ্রামোফোন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টেঙটাইল মিলস কর্পোরেশনের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলিম শরাফীর বেড়ে ওঠা রক্ষণশীল পরিবারে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কলিম শরাফী আধুনিক ও প্রগতিশীল মানসচিন্তার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ১৯৪৬ সালে এইচএমভি থেকে বের হয় তাঁর প্রথম গণসঙ্গীতের রেকর্ড। ১৯৫৭ সালে ‘আকাশ আর মাটি’ চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীত গান কলিম শরাফী। পরের বছর থেকে রেডিওতে কলিম শরাফীর গান সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিলো। কলিম শরাফী ‘সোনার কাজল‘ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক ছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। কবিয়াল রমেশ শীলকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি। কলিম শরাফী একাধিক চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। এর মধ্যে সূর্যস্নান চলচ্চিত্রে তাঁর কণ্ঠে ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কলিম শরাফী বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা ও নাগরিক নাট্য অঙ্গনের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী অন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গঠিত গণ অদালতে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারিতে। সঙ্গীত শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য কলিম শরাফী একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১০ সালের ২ নভেম্বর শিল্পী কলিম শরাফী প্রয়াত হন।