চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পঞ্চবার্ষিকী পৌরকর মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় গৃহকর বৃদ্ধির আশংকা করছেন নগরবাসী। তবে সেটা নাকচ করে দিয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, করের হার বাড়বে না। বরং কর আদায়ের আওতা বাড়ানো হবে। গতকাল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের পঞ্চম সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন মেয়র। অবশ্য পৌরকর পুনর্মূল্যায়নের উপর ২০১৭ সালে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চসিক গত ৩ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে ‘প্রশ্নবিদ্ধ এসেসমেন্ট’র আলোকে তথা বর্ধিত গৃহকরই পরিশোধ করতে হবে করদাতাদের। তাই নগরবাসী স্থগিতাদেশ বহাল চান। বিশিষ্টজনরাও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করদতাদের আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় পুনর্মূল্যায়ন আপাতত শুরু না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। সিটি মেয়রের বক্তব্যে কর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় হতাশ নগরবাসী।
এদিকে গতকালকের সভায় গৃহকর প্রসঙ্গে মেয়র আরো বলেন, কোনো ভবন দুই তলা থাকা অবস্থায় যে কর দিত এখন যদি তা তিন তলা, চার তলা বা বহুতল হয়ে যায় তা হলে বর্ধিত অংশের জন্য কর ধার্য কোনোভাবে অযৌক্তিক হয় না।
সভায় চসিককে স্বাবলম্বী করার ইঙ্গিত দিয়ে মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে নগরবাসীর কর দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এই আয় দিয়ে সেবার পরিধি বাড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই নিজস্ব ভূ-সম্পত্তিতে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন এলাকায় কি ধরণের আয়বর্ধক প্রকল্প করা যায় সেজন্য কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, চসিকের অব্যবহৃত ভূ-সম্পত্তিতে একাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা এসেছে। প্রস্তাবনাগুলো যথাযথ কিনা তা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে যাচাই-বাছাই করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়াা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য রূপান্তরেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের প্রস্তাব বিবেচনাধীন।
তিনি বলেন, চসিকের দু’টি টেন্সিং গ্রাইন্ড আছে। এগুলো এখন পাহাড় সমান স্তুপে পরিণত হয়েছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এখানকার স্তুপে অপসারণে উদ্যোগী একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোও বিবেচনা করছি।
তিনি বলেন, শহরে মেট্রোরেল ও মনোরেল করার প্রস্তাব এসেছে। মেট্রোরেলের ব্যাপারে একটা জরিপ আমাদের আছে। কিন্তু মনোরেলের ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। মনোরেলের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একটি আধুনিক শহরের জন্য দু’টি রেল সিস্টেম খুবই কার্যকর।
কথা রাখে নি সিডিএ :
খালে দেওয়া বাঁধ অপসারণে সিডিএ কথা দিয়েও রাখেনি বলে দাবি করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, আমরা সিডিএ কে অনুরোধ করেছিলাম, বর্ষার আগেই খালগুলোর যে অংশে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহের পথ আটকানো হয়েছে তা অপসারণ করা হোক। কিন্তু কথা দিয়েও সিডিএ কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি। এসময় মেয়র জলাবদ্ধতার জন্য জনদুর্ভোগ হলে তার দায় সিডিএকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকালেও নগরে সৃষ্ট জলজটে নগরবাসীর দুর্ভোগ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিডিএ খালের দু’পাশের যে অংশে রিটেইনিং ওয়াল তুলেছে সেখানে খালের মাঝেই মাটির স্তূপ করেছে। এবং এই মাটি না সরিয়ে দিয়ে স্কেভেটর দিয়ে সমান করায় খালের মধ্যে রাস্তা হয়ে গেছে।
মেয়র বলেন, সিডিএ বলেছে তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু প্রকল্পই যখন বাস্তবায়ন হয়নি তখন ব্যবস্থাপনার কথা আসে কেন? সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বুঝিয়ে না দেওয়ার আগে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারি না।
মেয়র সিডিএর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানো হলেও এই সময় নগরীকে জলজট থেকে মুক্ত করার কোনো পথ করছে কি ?
পলিথিন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ :
পলিথিন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, পলিথিন সভ্যতার অভিশাপ। কর্ণফুলীতে পলিথিনের জমাট ও ভারী আবরণে ড্রেজিং করা হচ্ছে। শহরের নদী নালায় ও পলিথিনের স্তুূপ পড়ে আছে। এই পলিথিন জলাবদ্ধতার বড় কারণ। পলিথিন মুক্ত নগরী গড়তে আইন চাই।
তিনি আরো বলেন, ফুটপাত দখল মুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান থাকবে। নগরীতে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা অবৈধ স্থাপনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে আইনি ক্ষমতা সম্পন্ন সিটি আদালত চাই। তিনি বলেন, নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন ও তা সরিয়ে ফেলতে ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ৮ লাখ টাকা করে মোট তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।