কর্মসংস্থানই নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে

| বুধবার , ১০ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা শিশুকাল থেকে মানুষকে তার অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, মানুষকে আলোকিত করে, জীবনে গতি আনে, নতুন পথ দেখিয়ে জীবন গড়তে সহায়তা করে। সন্তান জন্মের পর সে একেবারেই কাদামাটির মতো থাকে, তাকে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে হয়। সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য জ্ঞান অর্জন আবশ্যক, যা তাকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করে। একজন নারী সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন। সেই নারী হলেন মা। মায়ের মন অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির যা সন্তানকে আকৃষ্ট করে। মায়া-মমতায় ঘিরে সন্তানকে এগিয়ে যেতে পথ দেখায়। একজন শিক্ষিত মা-ই পারে তার সন্তানের সুপ্ত মনোবৃত্তির বিকাশ ঘটাতে। তা ছাড়া জন্মগতভাবে সন্তান মায়ের প্রতি দুর্বল থাকে, যা তাকে মায়ের চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত করে।
শিক্ষার সঙ্গে পাশাপাশি উচ্চারিত হয় সুশিক্ষা। এটি সংলাপ এবং মতপ্রকাশের ভিত্তিতে তৈরি হয়। যেটি মতামত সংহতিকরণের সংস্কৃতিকে সমর্থন করে এবং যেখানে বিশ্বাস এবং প্রত্যয় প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে। শিক্ষাবিদরা বলেন, স্বাধীন, ন্যায়পরায়ণ, পূর্ণাঙ্গ মানুষ যারা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সক্ষম, তাদের আরও উৎসাহিত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে সুশিক্ষা। আরেকটি কারণের জন্য সুশিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো সামাজিকভাবে সচল থাকা এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠায় এর সুস্পষ্ট ভূমিকা। শিক্ষার সঙ্গে নারীদের অগ্রযাত্রা নির্ভর করে।
শিক্ষা মানুষকে দেয় আত্মশক্তি, কর্মক্ষমতা, মনুষ্যত্ববোধ ও সুস্থ জীবনচেতনা। দুঃখজনকভাবে সত্য, আমাদের দেশে দীর্ঘকাল নারীশিক্ষা ছিল অবহেলিত। এর জন্য আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যেমন দায়ী, তেমনি নারীরাও কম দায়ী নয়। প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ছিল চরমভাবে অবহেলিত, নির্যাতিত। নানা সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারীরা ছিল অনেকটা বন্দিনী, অবরোধবাসিনী। তাই নারীদের এগিয়ে আনা, সামাজিক সুরক্ষা এবং দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সুশিক্ষিত জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। নারীর অগ্রযাত্রায়, নারীর ক্ষমতায়নে একটি হাতিয়ার হলো শিক্ষা অর্জন করা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। ৮ কোটি ২৪ লাখ পুরুষ এবং নারী ৮ কোটি ২২ লাখ। অন্যদিকে, বিশ্বে নারী-পুরুষের অনুপাত হল ১০১ জন নারীর বিপরীতে ১০০ জন পুরুষ।
বাংলাদেশের ৮ কোটি ২২ লাখ নারীর ১৬ কোটি ৪৪ লাখ হাতকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব। নানাভাবে নারী সমাজকে পিছেয়ে রাখা হয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের অধিকার ও জ্ঞান অর্জন থেকে। কিন্তু বোঝা উচিত যে, নারীর পিছিয়ে থাকা মানে জাতির অগ্রগতি রোধ করা। নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ও বৈষম্য সৃষ্টি করে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও উন্নত জাতি গঠনের স্বপ্ন।
ফরাসি বিপ্লবের জেনারেল ও ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেব। এজন্য বলা হয় নারী শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল ফ্রান্স থেকে। আমরা যদি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারি দেশ বদলে যাবে। সুশিক্ষিত জাতি গঠিত হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নারীরা এগিয়ে থাকার কারণ হলো তাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়, সমাজ ব্যবস্থায় বৈষম্য নেই। আইনের রয়েছে যথার্থ প্রয়োগ। রাস্তায়-পার্কে, বাজার-বন্দর, বাস-ট্রেন, অফিস-আদালত সর্বক্ষেত্রে রয়েছে তাদের পদচারণা, কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। রয়েছে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা। দিন রাত সমানতালে এগিয়ে চলছেন নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ ও জাতি গঠনের কাজে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের ধ্যান-ধারণার তেমন পরিবর্তন হয়নি। যদিও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু নানা ধাপে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরাই।এখনও সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে নারীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর কুসংস্কারে ডুবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকে। যে বাধার শিকার হয়েছিলেন সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়া। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে নারী শিক্ষার উন্নয়ন একটি অন্যটির পরিপূরক।
একমাত্র শিক্ষাই যেমন পারে নারীকে সমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে, তেমনি নারীরাই পারে সুশিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। নারীকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সরকার সচেষ্ট। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এর ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা শিক্ষিত হয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। নারীকে স্বাবলম্বী হতে হলে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কেননা কর্মসংস্থানই নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে। আর যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও নারীরা বর্তমানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখছে এবং সুশিক্ষিত হয়ে উপার্জনে অংশ নিচ্ছে, তাদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তর। তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, ব্যাংকার, পুলিশসহ সব স্বনামধন্য পেশাতে যুক্ত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষকতা পেশায়ও এগিয়ে তারা। তবু আমরা বলি, আরো উন্নয়ন চাই। তাদের অগ্রগতি মানে জাতির অগ্রগতি। দেশের স্বার্থেই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে